নাগ পঞ্চমী: সাপের প্রতি ভারতের শ্রদ্ধা ও আরাধনা




বার্ষিক "নাগ পঞ্চমী" উৎসবটি ভারতজুড়ে হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র অনুষ্ঠান, যা সাপের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও আরাধনার প্রকাশ ঘটায়। এই উৎসবটি শ্রাবণ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয়, সাধারণত জুলাই বা আগস্ট মাসে। এটি নাগ দেবতা এবং নাগ কুলের উপাসনা ও শ্রদ্ধাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
পাখীর কাক থেকে সাপের উৎপত্তি
ভারতীয় পৌরানিক কাহিনী অনুসারে, "নাগ পঞ্চমী" উৎসবটির একটি আকর্ষণীয় উৎপত্তি রয়েছে। কথিত আছে যে এক সময় বিশ্বামিত্র মুনি খাদ্যের জন্য একটি কাক (কাক)কে মেরেছিলেন। কাকটিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য, তার স্ত্রী ঋষিকা অমৃত পাওয়ার জন্য ভগবান হরি বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। বিষ্ণু তার অনুরোধ মঞ্জুর করেছিলেন এবং অমৃত নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কাকটি ইতিমধ্যে মারা গিয়েছিল, তাই ঋষিকা অমৃতটি কাকের চঞ্চুতে ঢেলে দিয়েছিলেন। অমৃতের স্পর্শে, কাকটি অলৌকিকভাবে একটি বিশাল সাপে রূপান্তরিত হয়েছিল। এই সাপটিকেই "নয়ন" নামে পরিচিত হিন্দু নাগদেবতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
সাপ: ভয়ের পুরানো প্রতীক
সাপগুলি বরাবরই ভারতীয় উপমহাদেশে ভীতি ও শ্রদ্ধার একটি চিত্র রূপে বিদ্যমান। তাদের বিষাক্ত কামড় এবং পূজা ও আরাধনায় তাদের ভূমিকার কারণে কৃষিভিত্তিক সমাজগুলিতে সাপকে সর্বদা গভীরভাবে ভয় করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে, সাপকে নাগ দেবতাদের রূপান্তরিত রূপ বলে মনে করা হয়, যারা বিশ্বের অধীন জলাশয়ের রক্ষক হিসাবে কাজ করে।
উপাসনার রীতি-নীতি
"নাগ পঞ্চমী" উৎসবটি সাপের আরাধনা এবং তাদের কাছ থেকে রক্ষা কামনার একটি দিন। দিনটির শুরুতে, ভক্তরা তাদের বাড়ির সামনে সাপের ছবি বা মূর্তি আঁকেন। তারা দুধ, ফুল এবং মিষ্টি দিয়ে সাপ দেবতাদের পূজা করে। কিছু অঞ্চলে, সরাসরি সাপকেও পূজা করা হয়, যা একটি সাহসী কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।
সমাজের ভূমিকা
"নাগ পঞ্চমী" উৎসবের দিনে, সাপ ধরার পেশাদাররা গান গায় এবং বিশেষ নৃত্য করে। এই গানগুলি নাগ দেবতাদের প্রশংসা করে এবং তাদের কাছ থেকে রক্ষা কামনা করে। সমাজে সাপ ধরার পেশাদারদের একটি সম্মানিত স্থান রয়েছে, কারণ তারা ঘরবাড়ি এবং খेत থেকে বিষাক্ত সাপ অপসারণ করে।
বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা
সাপ সম্পর্কে মানুষের ভীতি এবং শ্রদ্ধা আজও ভারতীয় সমাজে একটি উল্লেখযোগ্য দিক। "নাগ পঞ্চমী" উৎসবটি ভারতের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অনন্য প্রকাশ, যেখানে প্রাণী জগতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণীটিরও পবিত্রতা ও শক্তির চিহ্ন হিসাবে সম্মানিত হয়।