নাটকীয় নাট্যের মুখে হাসল না শিশু রাজ্য




এই বছরের নবান্ন উৎসবকে ঘিরে নানা চর্চা, সমালোচনা এসেছে। রাজ্য সরকারের দাবি মতো এবারের নবান্ন উৎসব হলো নাটকীয়তার মুখ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে তেমন কোনো নাটকীয়তার ছাপ নেই। শুধু কি তাই? এবারের নবান্নের মুখে মলিন সেই শিশুদের হাসি। করোনা মহামারির কারণে গত দু'বছর নবান্ন উৎসব হয়নি। তাই এবছর ক্ষতিপূরণ করতে নবান্নে আয়োজন করা হয়েছিল নাটকীয় নবান্নের। কিন্তু সেই আয়োজনে তেমন কোনো আয়োজনের ছাপ দেখা যায় নি।
গত দুই বছর না হলেও করোনার আগে প্রতিবারই নবান্ন উৎসবে কৃষি প্রদর্শনী, লোক সংস্কৃতির আয়োজন, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিল্পীদলের নাচ-গানের আসর বসতো। এইসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নবান্ন মেলায় খাবারের স্টলগুলি হতো সবচেয়ে বেশি আকর্ষণের কেন্দ্র। কিন্তু এবার এসবের কিছুই ছিল না।
এবারের নবান্নকে ঘিরে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠেছিল। বেশ কয়েকদিন আগে কৃষক ফোরামের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, "কৃষকের উৎসবকে সরকার কর্পোরেটের উৎসবে পরিণত করতে চলেছে।" সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, ব্যাঙ্কের কর্মীদের জন্য টিকিট বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের কৃষকরা এই অনুষ্ঠানে প্রায় অনুপস্থিত ছিলেন। কৃষকদের বাদ দিয়ে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করার অভিযোগ উঠেছে সরকারের বিরুদ্ধে।
কৃষকদের অতীতে নবান্নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা কৃষিজাত পণ্য নিয়ে আসতেন নবান্নে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে তাঁরা কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিতেন। কিন্তু এখন আর সেই ছবি দেখা যায় না।
এবার নবান্ন উৎসবের কাঠামোয় পুরনো বাংলার আদলে একটি অস্থায়ী গ্রাম তৈরি করা হয়েছিল। তবে এই গ্রামে তেমন কিছু দেখার মতো ছিল না। কেবল কয়েকটি বাঁশের ঘর, একটি পুকুর এবং কয়েকটি গাছ। নবান্নে আসা দর্শকরা এই কৃত্রিম গ্রামটি দেখে একেবারেই সন্তুষ্ট হননি।
নবান্ন উৎসবের আরেকটি আকর্ষণ হলো বিদেশি দেশের খাবারের স্টল। প্রতি বছরই এইসব স্টলে ভিড় থাকে। তবে এবার সেইসব স্টলও ছিল অনুপস্থিত।
এবারের নবান্ন উৎসবের মুখ হয়েছিল মলিন। সেই মলিন মুখে আর হাসল না শিশুরা। শুধু শিশুরাই নন, সব বয়সী মানুষের মুখেই ছিল একই মলিনতা। আসলে এই নবান্ন উৎসব হয়েছিল সরকারের জন্য, সরকার কর্মীদের জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে রাজ্যের কৃষকরা বাদ পড়ে গিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠান থেকে।
এই উৎসবে আসা মানুষদের মুখে মলিনতা ছিল কারণ তাঁরা হতাশ হয়েছিলেন। তাঁরা আশা করে এসেছিলেন আগের মতোই নবান্নের মতো একটি জমজমাট অনুষ্ঠান। কিন্তু তাঁদের আশা পূরণ হয়নি।
এইবারের নবান্ন উৎসব ছিল সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সরকার কৃষকদের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ব্যবস্থা করেনি। এই অনুষ্ঠানকে শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি আনন্দঘন অনুষ্ঠান হিসাবে রাখা হয়েছিল।
এবারের নবান্ন হলো একটি দৃষ্টান্ত। এই দৃষ্টান্ত থেকে সরকারের শিক্ষা নেওয়া উচিত। ভবিষ্যতে আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে। নবান্ন হলো কৃষকদের উৎসব। সরকারের উচিত এই উৎসবটি কৃষকদের জন্যই আয়োজন করা।