নিঃশব্দে সোনার কাঠি থেকে ক্ষিপ্ত শ্যামক চন্দের চেতনার জলসা




নিঃশব্দে ক্রীড়ার জয়পতাকায় ওড়ানো সোনার কাঠিটি নিয়ে প্যারিসের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের সামনে অতীতের দুর্দিনে বিদ্যুৎকন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শ্যামক চন্দ্রকে চোখে জল খাইয়ে দিতে পেরেছিলেন। বিশ্ব ক্রীড়ায় ভারতের নক্ষত্র নিরজ চোপড়ার এমনই সম্মান আর ভালোবাসার বন্যায় ভাসতে হয়েছিল সংগীতের পথিককে।

ওই দিনের কথাই স্মরণ করছিলেন শ্যামক চন্দ্র। বললেন, "আমি তো অবাক। নিরজ যে এভাবে আমাকে অভিবাদন করব, তা ভাবতে পারিনি। তখন ওর হাতে ট্রফি, জয়ের আবেগে উচ্ছ্বসিত, স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক, টিভির সামনে কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু ও তা কিছু ভাবল না। আমার কাছে এসে প্রণাম করল।"

সোনার কাঠির জয়যাত্রা

বিশ্ব ক্রীড়ার ইতিহাসে নিরজ তার জেতার স্মৃতিকে স্থায়ী করে রেখেছেন। দেশের ঘরে ঘরে এসব খবর গিয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু এই জয়যাত্রার শুরু সেরকম জাঁকজমকপূর্ণ ছিল না। নীরবে, নিভৃতেই চলেছে নিরজের অনুশীলন। নিজের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে নিরজের টার্গেট থাকে কোন দিন যেন হাতে সোনার কাঠি থাকে।

কেউ হয়তো জানে না, নিরজ যখন প্রথম অ্যাথলেটিক্সে পা রাখেন, তখন দেশের অন্য ক্রীড়াবিদদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নের আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে দিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে, হতাশের গহ্বরে পড়েও স্বপ্নকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন নিরজ।

মুহূর্তটি অমর

প্রতিযোগিতার মূহুর্ত ঘনিয়ে আসছিল। স্টেডিয়ামে শব্দহীন উত্তেজনা। টাটকা বায়ু ভালোবাসে নিরজ। খোলা মাঠে তিনি দাপিয়ে বেড়ান। তাকে আর আটকে রাখা যায় না। শুরু হলো প্রতিযোগিতা, নিরজ পুরো শক্তি দিয়ে কাঠি ছুড়লেন। সেই কাঠি যেন নিরজের স্বপ্নের উড়ানে সহায়ক হয়ে দাঁড়ালো।

আর কয়েক মুহূর্ত পরেই পুরো স্টেডিয়ামে উঠলো আনন্দের হৈ চৈ। ভারতের নিরজ চোপড়া, অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছেন। মুহূর্তটা যেন থেমে গেলো। স্বপ্ন আর সত্যের মধ্যে ক্রিস্টালের মতো স্বচ্ছতা। নিজের দেশের পতাকাকে উঁচুতে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের ঘরে ঘরে সোনার কাঠি তুলে ধরলেন নিরজ।

নীরবের হৃদয়ে সুরের তরঙ্গ

আর সেই মুহূর্তের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামক চন্দ্র। ক্রীড়ার জয়ের নেশার মধ্যে নিরজ যখন তাকে চিনে আবেগে ভেঙে পড়েন, তখন শ্যামক চন্দ্রের মনে হয়েছিল, তিনি সোনার কাঠির চেয়েও বেশি কিছু জিতেছেন।

এই ঘটনা প্রমাণ করে, ক্রীড়া আর সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর। শ্যামক চন্দ্র বললেন, "এটাই আমাদের দেশের সৌন্দর্য। আমরা ক্রীড়া আর সংস্কৃতি, দুটোকেই ভালোবাসি। আর এই দুটোই যখন একসঙ্গে হয়, তখন তা হয়ে ওঠে এক অসাধারণ মুহূর্ত।"

স্বপ্নের পথের কাঁটা

নিরজের এই জয়যাত্রা কিন্তু এত সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম। সুযোগ সুবিধার অভাব। কিন্তু নিরজ স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। আর সেই স্বপ্নকে রূপ দিতে নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন।

শুধু পরিশ্রম নয়, নিরজের মধ্যে ছিল দৃঢ় সংকল্পও। বাধা বিপত্তি এলেও তিনি পিছু হটেননি। সবসময় নিজের লক্ষ্যে মন দিয়েছেন। আর তাই তিনি পেরেছেন। তার জয় কেবল নিজের নয়, পুরো দেশের।

স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরো

নিরজ চোপড়ার কাহিনি আমাদের শেখায়, স্বপ্নকে কখনো ছাড়া যায় না। যতই বাধা আসুক না কেন, যদি স্বপ্নের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তাহলে একদিন অবশ্যই সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।

স্বপ্ন দেখা আর তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া, এ দুটোই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নিজের সীমাবদ্ধতা আর আশপাশের বাধা বিপত্তিকে অজুহাত না করে, নিরজের মতো স্বপ্নকে জড়িয়ে ধরেই চলতে হবে।

নিরজ চোপড়ার গল্প আমাদের অনুপ্রাণিত করুক, আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুক। তিনি যদি পারেন, তাহলে আমরাও পারি। কেউ যদি তার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে থাকে, তবে একদিন সেই স্বপ্ন অবশ্যই সফল হবে।