নেসন ম্যানডেলা




একজন প্রেরণাদায়ী নেতা যিনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে রঙিনতার বন্ধন থেকে মুক্ত করেছিলেন

নেসন ম্যানডেলা আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বিশিষ্ট নেতা ছিলেন। তাঁর দৃঢ়তা, সাহস এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা রঙিনতার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছিল এবং একটি গণতান্ত্রিক জাতিতে পরিণত হয়েছিল।

ম্যান্ডেলা জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সকেই প্রদেশের মভেজো গ্রামে। তিনি থেম্বু বংশের রাজকীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর গ্রামে এবং পরে ওয়েস্লিয়ান মিশন স্কুলে হয়। তিনি ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীনই ম্যান্ডেলা বর্ণবাদ এবং ন্যায়বিচারহীনতার বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC) এর সাথে যুক্ত হন, যা দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ সংস্থা ছিল। তিনি ANC যুব লিগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯৬০ সালে শার্পভিল গণহত্যা ম্যান্ডেলার জীবনে একটি পরিবর্তন সূচনা করে। এই ঘটনায় পুলিশ ৬৯ জন নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে। ম্যান্ডেলা এই ঘটনার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং সহিংসতা এবং অসহযোগের মাধ্যমে বর্ণবাদকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেন।

ম্যান্ডেলা ANC-এর সশস্ত্র শাখা উমখোন্টো উই সিজওয়ে (স্পিয়ার অফ দ্য নেশন) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বর্ণবাদ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংসতার কারণ হয়। ১৯৬৩ সালে ম্যান্ডেলা গ্রেফতার হন এবং সাবোটেজ এবং বিদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং রবেন দ্বীপে কারাগারে পাঠানো হয়।

ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। এই সময় তিনি কারাগারের কঠোর পরিস্থিতিতে অসাধারণ শক্তি এবং অধ্যবসায়ের পরিচয় দেন। তিনি তার সহকর্মীদের এবং কারাগারের কর্মীদের মধ্যে সম্মান এবং আদর অর্জন করেন। ম্যান্ডেলা তার কারাগার জীবনকে শিক্ষা এবং আত্মোপলব্ধির একটি সময় হিসাবে ব্যবহার করেন। তিনি আইন ডিগ্রী অর্জন করেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।

১৯৯০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কারাগার থেকে ম্যান্ডেলার মুক্তি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। তাঁর মুক্তি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথকে শক্তিশালী করে। ম্যান্ডেলা এবং রাষ্ট্রপতি এফডব্লিউ ডি ক্লার্ক ANC এবং সরকারের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য আলোচনা শুরু করেন।

  • ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় সর্বজনীন ভোটাধিকার ভিত্তিক প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ANC এই নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হন।
    • রাষ্ট্রপতি হিসেবে ম্যান্ডেলার প্রথম কাজ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় রঙিনতার অবসান ঘটানো এবং সত্য এবং মিলনের কমিশন প্রতিষ্ঠা করা।

    এই কমিশন বর্ণবাদ আমলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করে। ম্যান্ডেলা জাতীয় পুনর্মিলন এবং নির্মাণের পক্ষে কাজ করেন। তিনি সত্য ও মিলন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেন, যা অতীতের বর্বরতা ও অন্যায়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করার পরিবর্তে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা ও মিলনকে প্রাধান্য দেয়।

    ম্যান্ডেলা পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর শাসনামল দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে একটি রূপান্তরমূলক সময় ছিল। তিনি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করেন, অর্থনীতিকে উদার করেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করেন।

    রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরেও ম্যান্ডেলা শান্তি, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করা চালিয়ে যান। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শান্তি নির্মাণের জন্য কাজ করে।

    ম্যান্ডেলা বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধেয় হয়ে ওঠেন তাঁর নেতৃত্ব, অধ্যবসায় এবং মানবতার প্রতি অঙ্গীকারের জন্য। তিনি জাতিসংঘ শান্তি পুরস্কার, নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান রাষ্ট্রপতির মেডেল অফ ফ্রিডমসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন।

    ২০১৩ সালে ৯৫ বছর বয়সে ম্যান্ডেলা মারা যান। তাঁর মৃত্যু দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বিশ্বব্যাপী শোকের ঢেউ সৃষ্