পূর্ব বাংলা: অবিভক্ত বাংলার স্বপ্ন ও স্মৃতি




পূর্ব বাংলা...এক কথায় নয়, একটা ইতিহাসের নাম! আজও যার ছোঁয়ায় উঠে আসে বাঙালির হৃদয়ে এক অনির্বচনীয় আবেগের ঝড়। পাক-ভারত বিভক্তির সেই কালো দিনগুলোতে, পূর্ব বাংলা নামটি যেন হয়ে উঠেছিল এক আশার আলো, একতার প্রতীক।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর, ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন একটি বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিল। দেশকে দু'ভাগে ভাগ করে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হল ভারত ও পাকিস্তান। সেই বিভাজনে বাংলাকেও ভাগ হতে হয়েছিল। পূর্ব বাংলা রইল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত, আর পশ্চিম বাংলা ভারতের অংশ হল।
বিভক্তির এই বেদনাময় ঘটনা বাঙালিদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। একই ভাষা, একই সংস্কৃতির মানুষদের হঠাৎ করে দু'ভাগে ভাগ করা হয়ে গেল। পূর্ব বাংলা তখন হয়ে উঠল তাদের এক আবেগের পোষ্য। এমন এক স্বপ্নের ভূমি, যেখানে সব বাঙালি একসঙ্গে থাকে, এক স্বনালী আকাশের নিচে।
সেই স্বপ্ন পূরণ না হলেও, পূর্ব বাংলার নামটি আজও বাঙালিদের হৃদয়ে বেঁচে আছে। যেন এক স্মৃতির ফুল, যা আদরের অভিষেকে আজও প্রস্ফুটিত হয়। সাহিত্য, সংগীত, নাটক—সর্বত্রই পূর্ব বাংলার ছায়া।
সত্যজিৎ রায়ের "পথের পাঁচালি" চলচ্চিত্রে পূর্ব বাংলার গ্রামীণ জীবনের মর্মস্পর্শী চিত্র আঁকা হয়েছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলোতে পূর্ব বাংলার মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে পূর্ব বাংলার মাটির সুবাস, নদীর কলতান, মানুষের আবেগ মিশে আছে।
পূর্ব বাংলা আজ আর নেই। কিন্তু এর স্মৃতি বাঙালিদের হৃদয়ে চিরকাল জ্বলবে। এটি একটি স্বপ্নের প্রতীক, একটি স্মৃতির ফুল। একদিন যে স্বপ্ন পূরণ হবে, সেই বিশ্বাস বাঙালির রক্তে মিশে আছে।
এই বিভাজনের ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বাঙালিরা। তবে এই ক্ষতকে জুড়ে দিতে আমরা সবাই মিলে কাজ করতে পারি। আমরা পারি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস বা পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ দিনগুলোতে একসঙ্গে জড়ো হয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদযাপন করতে। আমরা পারি দু'দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সেতু গড়ে তুলতে।
পূর্ব বাংলা আমাদের ইতিহাসের একটি অধ্যায়, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বিভক্তির বেদনা ও একতার ক্ষমতার কথা। আসুন আমরা এই স্মৃতিগুলোকে জাগিয়ে রাখি এবং একদিন আবার পূর্ব বাংলার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য কাজ করি।