বিঘ্ননায়কের জন্মকথা




যুগে যুগে বেদব্যাস সহ বিভিন্ন মুনিগণ তাঁদের গ্রন্থে বিঘ্নেশ্বর গণেশের জন্মের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন । সেসব বর্ণনার অর্থক্রম গণেশ পুরাণে সংকলিত রয়েছে। সেখান থেকে আমরা বিঘ্নেশ্বরের জন্মকথা সংক্ষেপে জেনে নিই -
সত্যুগে দানবরাজ আরক্তক ভীষণ তপস্যা করে ব্রহ্মাকে বরে প্রসন্ন করে। ব্রহ্মা আরক্তককে শিবের অনুরূপ অবিনশ্বর তেজস্বী মূর্তিদান করেন।অরক্তক বরে বলিষ্ঠ ও ঐশ্বর্যশালী হয়ে বিশ্ব জয়ের জন্য যুদ্ধ শুরু করেন। ভয়ংকর হাঙ্গামা হয়। ত্রাসে জগদম্বা ত্রাসিতা হয়ে দেবদেবীর শরণাপন্ন হন।
দেবগণের অনুরোধে শিব দুইটি ঘর্ষণ পাথর দিয়ে একটি বল তৈরি করেন এবং তা দেবদেবীর হাতে দিয়ে বলেন, এটা নিয়ে দানবের স্ত্রী পূষণির ঘরে প্রবেশ করোগে আর দানব যখন যুদ্ধে বেড়িয়ে যাবে, তখন তার স্ত্রী পূষণির ঘর সামনে গিয়ে এই বল দিয়ে তাকে তাড়া করবে আর সে এই বল পে achter দ্বারে যাবে।
দেবী শিবের কথা মতোই পূষণির ঘরে বল দিয়ে তাড়া করলে দানব শরীরচর্চার জন্য যে ঘষা পাথর দিয়ে দেহ মাখছিলেন, তা নিয়ে দরজার বাইরে এসে বলকে আঘাত করেন। বলের আঘাতে শরীরচর্চার জন্য ঘষা পাথরটা বলের সঙ্গে এতোই মিশে যায় যে তা জীবন লাভ করে। তার শরীর হয় বলের মতো স্থূল এবং হস্তি মুণ্ডের মতো তার মস্তক হয়। দেবী স্বর্গের অপ্সরা প্রিয়ঙ্গ্বাদেবীকে তাকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে বলেন। প্রিয়ঙ্গ্বাদেবী তা করেন । সেই কারণে তার নাম হয় গণেশ ।
গণেশের জন্মের পর স্বর্গে মহাসমারোহ হয়। সকলে প্রসন্ন মনে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করছিলেন। কিন্তু শনি দেব এসে গণেশের মস্তকে দৃষ্টিপাত করলে গণেশের মস্তক ছিন্ন হয়ে যায়।
বায়ুদেব আর সুব্রহ্মন্যানের অনুরোধে শিব হিমালয় পর্বত থেকে একটি হস্তির মস্তক নিয়ে এসে গণেশের শরীরের সঙ্গে জুড়ে দেন। এজন্য তার নাম হয় গজানন ।
গণেশের বিয়ের বিষয়টিও একটি মজাদার গল্প। একদা নারদ গণেশের কাছে এসে বলেন যে ভগবান শিব তোমার বিয়ে দেবেন। শিবের কাছে গিয়ে গণেশ এখানে নারদের বলা কথাটি জানালেন। কিন্তু শিব বললেন, আমি তোমাকে বিয়ে দেব না। কারণ তুমি আমার রূপ। আর রূপের সঙ্গে রূপের বিয়ে হয় না।
তাতেও না মেনে গণেশ সিদ্ধান্ত নিলেন পৃথিবীর প্রদক্ষিণ শেষ করে তবেই বিয়ে করবেন । এবার শিবের কাছে ভয়ে গেলেন নারদ। তিনি গণেশকে লুকিয়ে রাখার জন্য সাপ ধরার মন্ত্র দেন। গণেশ লুকিয়ে বসে, সাপ ধরে শিবের গলায় পরিয়েছেন।
একদিন শিব তার পুত্র সুব্রমণ্যনকে সাপুড়ে করে একটি প্রতিযোগিতা করেন। সুব্রহ্মন্যান হার মানে। গণেশ ভয়ে নিজের লুকানো স্থান ত্যাগ করে সুব্রহ্মন্যানের হয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। আবার গণেশ হারায়। দ্বিতীয়বার নিজ লুকানো স্থান থেকে বেরিয়ে সুব্রহ্মন্যানের হয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দিল। এবারও হেরে যায়।
তৃতীয়বার গণেশ পৃথিবীর প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করে ফিরে আসে এবং নিজের লুকানো স্থান থেকে বের হয়ে সুব্রহ্মন্যানের হয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। এবার গণেশ জিতে যায়।
যেহেতু গণেশ পৃথিবীর প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করলেন, তাই সবার আগে তার বিয়ে হওয়ার কথা।
আর সবচেয়ে বড় কথা তার বিয়ে হয় ঋদ্ধি ও সিদ্ধির সঙ্গে।