সারা জীবন খুব সাধারণভাবেই কেটে যায়। কোনো তুমুল তোলপাড় নয়, কোনো বিশেষ ঘটনাও নয়। মাঝে মধ্যে আসে বিপদাপদ। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির সামনে পড়ে যাওয়া, নদীর পাড়ে গিয়ে পা পিছলে পানিতে পড়ে যাওয়া। এমন ঘটনা ঘটে কিন্তু প্রাণ চলে যায় না। বেঁচে যাই। বেঁচে থাকার তীব্রতাও বুঝতে পারি না তখন।
মনে পড়ে ক্লাস এইটে পড়ি তখন একটা বই পড়েছিলাম। বইয়ের নাম ছিল বেঁচে থাকি। সেটা পড়ে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল ওই ছেলেটার (বইয়ের ছেলেটি) মতোই আমিও বেঁচে আছি। বেঁচে থাকার একটা অদ্ভুত তীব্রতা পেয়েছিলাম। অবাক হয়েছিলাম আসলে বেঁচে থাকাটাই কী এত বড় বিষয়!কিন্তু ঠিক কতটা বড় বিষয় তা তখন বুঝতে পারিনি। তখন বেঁচে থাকাটা কিছুটা সস্তারই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝলাম বেঁচে থাকাটা আসলে কতটা কঠিন। সহজ নয়। বিপদ ঘটতে থাকে। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী। আবার ঘটতে থাকে রাস্তা দুর্ঘটনা, নদীতে ডুবে যাওয়া। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক, হঠাৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এভাবেই বিপদ ঘটতেই থাকে। ঘটতেই থাকে মৃত্যুও।
অনেক সময় নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। মনে হয় বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই। যখনই কোনো দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর খবর শুনি তখনই মনে হয় আজও বেঁচে আছি, কেমন করে! মৃত্যুর হাতছানি কেন আমার দিকেও আসলো না। মৃত্যুকাল আমার এখনো আসে নি। এখনো বেঁচে আছি, বেঁচে আছি।এই অসহায়ত্বের মাঝেও একটু সান্ত্বনা খুঁজে পাই। বেঁচে থাকার লড়াইটাই আসলে আসল। এই লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে। যতকাল সম্ভব বেঁচে থাকতে হবে। কারণ মৃত্যু আসবেই। কিন্তু তার আগে এই পৃথিবীতে থাকার অভিজ্ঞতাগুলোকে উপভোগ করতে হবে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালোবাসা-ঘৃণা সবকিছুই অনুভব করতে হবে।
তাই বেঁচে থাকাটা আসলে একটা অভিজ্ঞতা। বেঁচে থাকার এই অভিজ্ঞতাটাকে যতটা সম্ভব পূর্ণতা দিয়ে উপভোগ করতে হবে। বেঁচে থাকার এই সুযোগটা কী অসাধারণ! বেঁচে আছি, এইটুকুই আজকের জন্য অনেক।আমি বেঁচে আছি। এইটুকুই যথেষ্ট। বেঁচে থাকতে পারার জন্য আমি খুব আনন্দিত। এই পৃথিবীটা খুব সুন্দর। এই সুন্দর পৃথিবীটাতে বেঁচে থাকাটাই আসল সৌভাগ্য।
এই পৃথিবীতে বাঁচতে পারার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।