বাজার স্টাইল আইপিও




এক সময় বাজারে লটারির মতো শেয়ার বিক্রি হত। লুটোটোর আইপিও বলেও তখন এই জিনিসটি পরিচিত ছিল। অল্ট্রা টেক-এর আইপিও বেরিয়েছিল দশ টাকায়। বাজার তখন মন্দা। কেউ আগ্রহ দেখায়নি। তাই কোম্পানি মূল্য কমিয়ে পাঁচ টাকা করে দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কেউ আগ্রহ দেখায়নি। কোম্পানি বাধ্য হয়ে তখন শেয়ার বিক্রি করেছিল লটারির মতো। একটা শংখলা বরাদ্দ হয়েছিল প্রতিটা শেয়ারের বিপরীতে। গ্রাহকদের হাতে লটারি টিকিট দেওয়া হয়েছিল। লটারিতে যাদের নাম উঠত, তারাই শেয়ারটি কিনতে পারতেন।

বাজারে তখন লটারি খেলার মতো আইপিও খেলা হত। দীর্ঘদিন এই প্রবণতা চলেছিল। কিন্তু বাজার উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে লটারি খেলার মতো আইপিও খেলার প্রবণতা। এখন আইপিও নিয়ে অনেক বেশি সচেতনতা আছে। লটারির মতো আইপিও খেলা হয় না এখন। তবে এখনও ক্ষেত্রবিশেষে লটারির মতো আইপিও বের করা হয়। যেমন সম্প্রতি হেডগেয়ার-এর আইপিও বেরিয়েছিল লটারির মতো। এই কোম্পানি কাস্টম ক্যাপ তৈরি করে।

কিন্তু বাজার স্টাইল আইপিও আসার পরে আবারও বাজারে লটারির মতো আইপিও খেলার মতো প্রবণতা ফিরে এসেছে। বাজার স্টাইল অর্থ একটি নির্দিষ্ট মূল্যবন্ধনীর মধ্যে আইপিও-র দাম বরাদ্দ করা হয়। এই মূল্যবন্ধনীর মধ্যে যে কোনও মূল্য হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই কোম্পানি নিম্নতম মূল্যবন্ধনী নির্ধারণ করে। যেমন, একটি কোম্পানি যদি নির্ধারণ করে যে তার আইপিও-র মূল্যবন্ধনী হবে 10-15 টাকা, তাহলে গ্রাহকদের এই মূল্যবন্ধনীর মধ্যে যে কোনও মূল্য অফার করতে হবে।

বাজার স্টাইল আইপিও অফার করলে বাজারের কাছে প্রকৃত মূল্য আবিষ্কারে সাহায্য করে। সাধারণ আইপিওতে অফার প্রাইস ডিসকাউন্ট করা হয়, তাই অনেক আগ্রহ থাকে এবং রিটেইল অ্যালোটমেন্ট হয় কম। তবে বাজার স্টাইল আইপিওতে রিটেইল অ্যালোটমেন্ট হয় বেশি। যার ফলে অল্প মূল্যবান গ্রাহকদেরও সুযোগ মেলে আইপিও-তে অংশগ্রহণের।

বাজার স্টাইল আইপিওর আরও একটি সুবিধা হল, এটি কোম্পানিকে তার সঠিক মূল্য আবিষ্কারে সাহায্য করে। যখন কোম্পানি নিজে মূল্য নির্ধারণ করে, তখন সেটা কখনও কখনও তার প্রকৃত মূল্যের থেকে বেশি বা কম হয়ে যায়। কিন্তু বাজার স্টাইল আইপিওতে কোম্পানি নিজে মূল্য নির্ধারণ করে না। তাই আইপিও-র দাম হয় বাজারের আবিষ্কৃত দাম।

যদিও বাজার স্টাইল আইপিওর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, এটি অন্য আইপিওর তুলনায় বেশি সময়সাপেক্ষ। বাজার স্টাইল আইপিওতে আবেদন জানানোর পরে আবেদনকারীদের মূল্য অফার করার জন্য কিছু সময় দেওয়া হয়। তারপরে কোম্পানি দামগুলো ভ্যালুয়েট করে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।

এছাড়া, বাজার স্টাইল আইপিওতে মূল্য আবিষ্কারের কাজটি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে ন্যস্ত থাকে। যদি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই কাজটি ঠিকভাবে না করতে পারে, তাহলে আইপিওর দাম প্রকৃত মূল্যের থেকে বেশি বা কম হয়ে যেতে পারে।

  • বাজার স্টাইল আইপিওর সুবিধা:
  • বাজারের কাছে প্রকৃত মূল্য আবিষ্কারে সাহায্য করে
  • কোম্পানিকে তার সঠিক মূল্য আবিষ্কারে সাহায্য করে
  • অল্প মূল্যবান গ্রাহকদেরও সুযোগ মেলে আইপিও-তে অংশগ্রহণের
  • বাজার স্টাইল আইপিওর অসুবিধা:
  • সময়সাপেক্ষ
  • মূল্য আবিষ্কারের কাজটি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে ন্যস্ত থাকে

এ সব কিছুর পাশাপাশি, বাজার স্টাইল আইপিও আনায় নির্গমকারীদের কিছু অতিরিক্ত খরচও বহন করতে হয়। কারণ, এই আইপিওে সাধারণ আইপিওর চেয়ে তালিকাভুক্তির আগে কিছু অতিরিক্ত অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তাই নির্গমকারীদের অতিরিক্ত ফি এবং খরচ বহন করতে হয়।

বাজার স্টাইল আইপিও একটি ভালো উদ্যোগ। এটি বাজারে অংশগ্রহণকারীদের কাছে শেয়ারের ন্যায্য মূল্য আবিষ্কারের সুযোগ দেয়। এছাড়া, এই পদ্ধতিটি আরও স্বচ্ছ এবং ন্যায্য। তবে, এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ এবং খরচবহুল হতে পারে। যে কারণে এটি সব আইপিওর জন্য উপযোগী নয়।