বট-সাবিত্রী ব্রত : অটল ভালোবাসার কাহিনী




বাংলা সংস্কৃতিতে বট-সাবিত্রী ব্রতের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি এমন একটি ব্রত, যেটি স্ত্রীলোকরা তাদের স্বামীর দীর্ঘজীবন ও কল্যাণের জন্য পালন করে থাকেন। বট-সাবিত্রী ব্রতের পেছনে একটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী কাহিনি রয়েছে, যা স্বামী-স্ত্রীর অটল ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
কাহিনিটি
সত্যবান নামে একজন দরিদ্র কিন্তু সৎ ও ধার্মিক যুবক ছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীর সঙ্গে গভীর ভালোবাসায় বাঁধা ছিলেন। একদিন, নারদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, সত্যবান অল্প বয়সেই মারা যাবেন। এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে সাবিত্রী হতাশ হননি। তিনি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলেন।
সত্যবান মারা যাওয়ার পর, সাবিত্রী তাঁর মৃতদেহ নিয়ে জঙ্গলে যান। সেখানে তিনি বট গাছের তলায় স্বামীর মৃতদেহ রেখে তপস্যা করতে শুরু করেন। তাঁর তপস্যার কঠোরতা ও দৃঢ়তা দেখে যমদেবও মুগ্ধ হন। তিনি সাবিত্রীকে স্বামীর জীবন ফিরিয়ে দিতে বলেন, তবে একটি শর্তে। সাবিত্রীকে যমের সঙ্গে স্বর্গে যেতে হবে।
সাবিত্রী এই শর্তে রাজি হননি। তিনি যমকে বলেছিলেন, "আমার স্বামী ছাড়া স্বর্গও আমার কাছে নরকের মতো।" যমদেব তাঁর ভক্তি ও অটল ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে সত্যবানের জীবন ফিরিয়ে দেন এবং তাঁদের উভয়কেই আশীর্বাদ করেন।
ব্রত পালন
বট-সাবিত্রী ব্রত সাধারণত জেষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী বা পূর্ণিমাতে পালন করা হয়। এই দিনে স্ত্রীলোকরা বট গাছের কাছে পুজো দেন এবং স্বামীর দীর্ঘজীবন ও কল্যাণের জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
ব্রতের তাৎপর্য
বট-সাবিত্রী ব্রত স্ত্রীলোকদের অটল ভালোবাসা এবং স্বামীর প্রতি তাদের দায়িত্ববোধের প্রতীক। এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গভীরতা ও আধ্যাত্মিক যোগসূত্রের প্রতিনিধিত্ব করে।
ব্রতের উপকারিতা
বট-সাবিত্রী ব্রত পালনের গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:
  • স্বামীর দীর্ঘজীবন ও কল্যাণ
  • দাম্পত্য সুখ ও সম্প্রীতি
  • পারিবারিক সম্পদের বৃদ্ধি
  • রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি
  • আধ্যাত্মিক উন্নতি
বট-সাবিত্রী ব্রত হল ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এটি স্ত্রীলোকদের স্বামীর প্রতি অটল ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। এই ব্রত পালন করে স্ত্রীলোকরা তাদের স্বামীর দীর্ঘজীবন ও কল্যাণের জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন এবং পারিবারিক জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।