বদলাপুর
আমাদের সবারই জীবনে এমন একটা জায়গা থাকে যেটা আমাদের মনে খুব গভীর ভাবে গেঁথে থাকে। যে জায়গাটায় আমরা আমাদের শৈশবের সবচেয়ে সুখের দিনগুলো কাটিয়েছি, যে জায়গাটার সাথে আমাদের অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে, সেই জায়গাটাই আমাদের বদলাপুর।
আমার বদলাপুর হলো আমার নানা-নানীর বাড়ি। এটা একটা ছোট্ট গ্রাম, যেখানে আমি প্রতিটা গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতাম। নানার বাগানে ফুল আর ফল গাছে ভর্তি। নানীর হাতের রান্না এতই সুস্বাদু যে আমি এখনও সেই স্বাদের কথা ভাবি। আর বিকালের গরমে বারান্দায় বসে আমরা সবাই মিলে গল্প করতাম।
কিন্তু জীবন কখনো স্থির থাকে না। আমার নানা-নানী বৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং আমাদের গ্রামের বাড়িটাও পুরনো হয়ে গেলো। আমরা আর সেভাবে গ্রীষ্মের ছুটিতে যেতে পারলাম না।
একদিন আমি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি বদলাপুরে যাব। আমি কয়েক বছর গ্রামের বাড়ি যাইনি। আমি জানতাম না যে সেটা এখন কেমন হয়েছে।
আমি যখন বদলাপুরে পৌঁছলাম, তখন শুরুতে আমার চোখে কিছুই পরিচিত মনে হলো না। রাস্তাগুলো আর বাড়িগুলো সব পাল্টে গেছে। কিন্তু যখন আমি নানার বাগানে ঢুকলাম, তখন আমার মনে হলো যেন সময় থেমে গেছে।
বাগানের গুলো এখনও আগের মতোই সুন্দর ছিল। ফল গাছগুলো এখনও ফল দিচ্ছিল। আমি বাগানের একটা চেয়ারে বসলাম এবং সবকিছু উপভোগ করতে লাগলাম।
হঠাৎ আমার চোখে পড়লো একটা ছোট্ট মেয়ে আমার দিকে আসছে। সে আমার দিকে হাত নাড়লো এবং বললো, "দাদা, আমি তোমাকে চিনি!"
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি তো এই মেয়েটাকে চিনি না।
"আমি তোমার নাতনি," সে বললো। "আমার নাম শায়লা।"
আমি আরও অবাক হয়ে গেলাম। আমার তো কোনো নাতনি নেই।
"এটা কীসের ব্যাপার?" আমি জিজ্ঞেস করলাম।
"আমার বাবা তোমার ভাই," সে বললো। "তার নাম সুমন।"
আমি বুঝতে পারলাম যে আমার ভাই সুমন বিয়ে করেছে এবং তার সন্তানও হয়েছে। আমার তো এসব কিছুই জানা ছিল না।
শায়লার সাথে আমার খুব ভালো সময় কাটলো। আমরা বাগানে ঘুরে বেড়ালাম, ফুলের গন্ধ নিলাম এবং পাখির কিচিরমিচির শুনলাম। আমি জানতে পারলাম যে সুমন এবং তার স্ত্রী শহরে থাকে। তারা মাঝে মাঝে বদলাপুরে আসে।
আমি যখন বদলাপুর থেকে ফিরছিলাম, তখন আমার মনে একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা নতুন জগত আবিষ্কার করেছি। আমি আমার ভাইয়ের মেয়েটাকে পেয়েছি, আমার নানা-নানীর স্মৃতিগুলোকে আবার দেখেছি।
বদলাপুর এখনও আমার বদলাপুরই। সেটা আমার শৈশবের স্মৃতিগুলোর জায়গা। কিন্তু এখন সেটা আরও কিছু বেশি। এটা আমার পরিবারের জায়গাও।