বিনাশ হল ভিস্তারা




ভারতের সেরা বেসরকারি বিমান সংস্থা বিস্তারার কফিনে শেষ কিলা পুঁতে দেয়া হয়েছে। রবিবার শেষ ফ্লাইটটিকে তাদের চূড়ান্ত বিদায়জ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
সময়টাও যেন মিলে গেল যেন– পুষ্পক রথের মতো আকাশেই বিস্তারার অন্তিম যাত্রা শেষ হয়ে গেল, নতুন কোন প্রয়োজন কিংবা অন্য কোনও কারণে মাটিতে নেমে আসেনি আজ আর।
২০১৫ সালে টাটা গ্রুপ এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের যৌথ উদ্যোগে ভারতের সবচেয়ে আকাঙ্খিত এভিয়েশন সেক্টরে বিনিয়োগ করা হয়েছিল।
বিস্তারার অক্সিজেন মাস্ক ঝুলে গিয়েছিল করোনার ঢেউয়ের সময়। লকডাউনের দুঃসময়ে কোম্পানির আয় বন্ধ হয়ে যায়। সংকট কেটে যাওয়ার পরেও আর মুখ তুলতে পারেনি বিস্তারা। বরং লোকসানের পাহাড় আরও বড় হচ্ছিল। কারওণে লোকসানের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি, ভারতের বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি ইদানীং তাদের অপারেটিং খরচ বাড়ার কারণেও ক্ষতির মুখে পড়েছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির পতনের মতো কারণগুলি তাদের ব্যবসায়িক পরিবেশকে কঠিন করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিস্তারার জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে তৈরি হয় একটা টানাপোড়ন। একদিকে ক্রমবর্ধমান লোকসান, অন্যদিকে ভারতীয় এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। এই অবস্থায় গত বছরই সিদ্ধান্ত নেয় টাটা। টাটাদের সঙ্গী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সও মেনে নেয় সেই সিদ্ধান্ত।
এরপর এয়ার ইন্ডিয়ায় হরিশ্চন্দ্র ভঙ্গির বিস্তারা। আর এই নিয়েই বিতর্ক শুরু হল। বিশেষজ্ঞদের মতে বিস্তারা যেভাবে শেষ হল, তা ভারতের বেসরকারি এভিয়েশন সেক্টরের জন্য সুখকর নয়। বেসরকারি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য প্রতিযোগিতা কমে গেল। বিস্তারার মতো প্রিমিয়াম সেবাও আর থাকবে না।
বিমান সংস্থাগুলির প্রাক্তন কর্মীদের সংগঠন 'ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এয়ার ট্রান্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ' (ফিয়াটি) এর সাধারণ সম্পাদক অশোক তনেজার মতে, এটি ভারতের বিমান পরিবহন শিল্পের জন্য দুঃখজনক দিন। "বিস্তারা একটি দুর্দান্ত বিমান সংস্থা ছিল এবং এটি ভারতীয় বিমান চলাচলের দৃশ্যপটে একটি বড় শূন্যতা তৈরি করবে," তিনি বলেছেন।
যাই হোক, আকাঙ্খা আর স্বপ্ন যে দুটো আলাদা জিনিস বিস্তারার কিসসা আজ তাই প্রমাণ। নতুন স্বপ্নে হারিয়ে গেল আকাঙখা। তাই একটু হলেও মনটা খারাপ হয় আজ।