বাবিতা ফোগাট: শক্তি, দৃঢ়তা এবং আত্মত্যাগের প্রতীক




লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলার মতো একটি অসাধারণ যুবতী হলেন বাবিতা কুমারী ফোগাট। এ স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কুস্তিগীর একজন প্রেরণা, যিনি নারীদের সম্ভাবনার সীমানা ভেঙেছেন এবং সমাজে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে ধারনা পরিবর্তন করেছেন।

ফোগাটের যাত্রা শুরু হয়েছিল হরিয়ানার একটি ছোট্ট গ্রামে, যেখানে তিনি তার পিতা মহাবীর সিং ফোগাটের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। স্ত্রীর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে, মহাবীর সিং তার মেয়েদেরকে কুস্তি শেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় সমাজে একটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল, যেখানে নারীদেরকে সাধারণত গৃহকর্মে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

কিন্তু বাবিতা এবং তার বোনেরা তাদের স্বপ্ন বাদ দিতে অস্বীকার করেছিল। তারা কঠোর পরিশ্রম করেছিল, প্রতিদিন রৌদ্রের তাপ এবং কুস্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিল। তাদের অধ্যবসায় এবং দৃঢ়তার ফল এসেছে 2010 সালে, যখন বাবিতা কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য পদক জিতেছিল। এই জয় ভারতীয় নারী কুস্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল এবং এটি বাবিতার উদীয়মান তারকার হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল।

তার পর থেকে, বাবিতা আরও অনেক কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তিনি 2014 সালের কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণ পদক জিতেছেন এবং 2018 সালের কমনওয়েলথ গেমসে আবারও রৌপ্য পদক জিতেছেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপেও সাতটি পদক জিতেছেন।

বাবিতার কুস্তি ক্যারিয়ার শুধুমাত্র ক্রীড়াগত কৃতিত্ব দ্বারা সংজ্ঞায়িত নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের অনুঘটক হিসাবেও তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি নারীদের ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি প্রায়ই স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেন, বিশেষ করে কুড়িয়েদের জন্য।

বাবিতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলির মধ্যে একটি হল তিনি তার জীবনকাহিনীর উপর ভিত্তি করে "দঙ্গল" নামে একটি বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ছবিটি বিশ্বব্যাপী $300 মিলিয়নেরও বেশি আয় করে বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙেছে এবং নারীদের কুস্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে।

বাবিতা ফোগাট আধুনিক ভারতের একটি প্রতীক। তিনি একজন কুস্তিগীর, একজন প্রেরণা এবং একজন সমাজ সংস্কারক। তিনি এমন একজন মহিলা, যিনি কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ়তা এবং আত্মত্যাগের ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করেছেন। তিনি ভারতীয় মেয়েদের কাছে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহসের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।