বর্তমান ইসলামী জগতে আয়াতুল্লাহ খামেনীর অবদান
বাংলাদেশের একজন কৃষাণী মা ও একজন আলেম পিতার সন্তান আয়াতুল্লাহ খামেনী, ১৯৩৯ সালের ১৯ এপ্রিল ইরানের পবিত্র নগরি মাশহাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম-শ্রেণীর ফকিহ, চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং ইসলামী জগতের প্রভাবশালী নেতা। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনী তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ইসলামী পড়াশোনার জন্য উৎসর্গ করেছেন। তিনি প্রথমে মাশহাদের সুপরিচিত হাউজেহ ইমাম রেজার গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করেন এবং পরে নাজাফের গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহসহ সময়ের বিখ্যাত ফকিহদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। তার শিক্ষামূলক কর্মজীবনের কিছুটা আগে থেকেই তিনি স্বৈরশাসক শাহের শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট আলেমদের সাথে তিনি ইসলামি বৈপ্লবের প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন।
ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর তিনি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন, যার মধ্যে একটি হল সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব। এছাড়াও তিনি ইরানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় যখন আয়াতুল্লাহ খামেনী দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডারেরও দায়িত্ব পালন করেন। এই যুদ্ধ ইরানের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। ইমাম খোমেনীর মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ খামেনীকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত করা হয়।
এরপর আয়াতুল্লাহ খামেনী ইরানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নেতৃত্বে ৩৪ বছর অতিবাহিত করেছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ইরানের অগ্রগতি এবং উন্নয়নে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন এবং তিনি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামিক নেতা হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি তার জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা এবং আধ্যাত্বিক দিক নির্দেশনার জন্য পরিচিত। তিনি শুধুমাত্র ইরানে নয়, বরং বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে সম্মানিত।
ইসলামী জগতের অস্থিরতার এই সময়ে আয়াতুল্লাহ খামেনী শান্তির নীতি এবং আল্লাহর শাসনের প্রতি তার অটল বিশ্বাসের জন্য পরিচিত। তিনি সবসময় বিশ্বাস করেন যে প্রকৃত শক্তি মানুষের ঐক্যের মধ্যে নিহিত এবং প্রকৃত শক্তি আরো তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ইসলামী জগতের ঐক্যের একজন সোচ্চার সমর্থক এবং তিনি মনে করেন যে এই ঐক্যের মাধ্যমে মুসলমানরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে।
ইরানী সমাজ এবং বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে আয়াতুল্লাহ খামেনীর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হল তার সহজতা এবং সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার ক্ষমতা। তিনি সবসময় বিশ্বাস করেন যে যতই দায়িত্বশীলতা বা কর্তৃত্ব থাকুক না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল মানুষের সাথে সহযোগিতা এবং তাদের চিন্তা।
আয়াতুল্লাহ খামেনী একটি পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় সন্তান। তিনি সৈয়দ জোয়াদ খামেনী এবং হাজেরাত খানুমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ জোয়াদ খামেনী একজন সংগ্রামী বিপ্লবী এবং একজন আলেম ছিলেন। শৈশব এবং কৈশোরকালে আয়াতুল্লাহ খামেনী একজন ভালো পড়ুয়া এবং তিনি অল্প বয়সেই বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনী তার অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ইমাম খোমেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ খাতামুল আনবিয়া পদক এবং আন্তর্জাতিক শতাব্দী আইনজীবী পুরস্কার। আয়াতুল্লাহ খামেনী বর্তমান ইসলামী জগতের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং তিনি মুসলমানদের রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে সম্মানিত।