১৯৬৫ সালের ১১ ই আগস্ট ভারতের উচ্চতম এবং সবচেয়ে নির্জন অঞ্চলগুলোর মধ্যে যেখানে শুধুমাত্র দুর্গম রাস্তাঘাট এবং বরফ ঢাকা পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই, সেই মরুভূমি সীমান্তে অবস্থিত বীর অরণ্য বা বীর এসটেট নামক কিদবায় এলাকায় ১০০০ জনেরও বেশি কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষকদের বার্ষিক কৃষি সেমিনার শুরু হয়েছিল। এই সেমিনার দেশের সাহসী রাষ্ট্রপতি ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়েছিল। এই সেমিনার প্রায় বরফাবৃত এবং সম্পূর্ণ সাদা অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সেমিনারে অংশ নিতে আসা হাজার হাজার কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষকেরা সাদা বরফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে দুঃসাহসিক মনোভাবে চারদিকে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। চারদিকে অসংখ্য বরফের পাহাড় এবং দূরে নীল আকাশের সাথে অসংখ্য পাইন এবং হিমালয়ের মতো জায়ান্ট সিডার গাছগুলির দৃশ্য ছিল সত্যিই অপূর্ব।
যদিও এই সেমিনারের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। তবুও বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, চারপাশের পাহাড়ে বিশিষ্ট হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন ছিল। তারা সেমিনার ক্যাম্পের যে কোনো ধরনের নিরাপত্তার হুমকির বিরুদ্ধে দরকার পড়লেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এই সেমিনারে কোনো রকমের নিরাপত্তার ঘটনা ঘটেনি। দেশের শত্রুরাও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহস এবং তাদের তৎপরতার প্রশংসা করেছেন এবং বীর অরণ্য সেমিনারকে ভারতের অসাধারণ শক্তির নিদর্শন হিসেবে মনে রাখিয়েছেন।
সাধারণত পর্বতারোহীরা সাদা বরফে হাঁটার সময় চোখ ও মুখ ঢেকে রাখেন। কিন্তু সেমিনারে অংশগ্রহণকারী কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষকদের মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণনই চোখে চশমা এবং মুখে মাস্ক পরেছিলেন। বাকি সবাই প্রচণ্ড সূর্যের আলো এবং বরফের সাদা আলোতেও খালি চোখে চারদিকে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন।
রাজ্যপাল শ্রী সত্য নারায়ণ সিনহ এই সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তৃতা দিয়ে উপস্থিত জনতাকে আন্তরিক স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় এসটেটের ইতিহাস এবং বর্তমানে দেশের উন্নয়নে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এই সেমিনার এখানে আয়োজন করা আজকের দিনে সত্যিই একটি শক্তিশালী আকর্ষণ।
তাঁর বক্তৃতার পর, প্রধানমন্ত্রী শ্রী শাস্ত্রীর উপদেষ্টা ডক্টর কালাম, বাংলার সাহসী মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপতি বৈদ্যনাথ ত্যাগী, হিমাচল প্রদেশের পরিবহনমন্ত্রী শ্রী বিদ্যাধর ভারই প্রমুখ কৃষি বিষয়ক বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই তাঁদের বক্তৃতায় এসটেট এবং কৃষি উন্নয়নের গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তারপরে, সম্মেলনের চেয়ারম্যান ডক্টর কর্ম চাঁদ প্রেম এসটেটের বিভিন্ন কৃষি ব্যবস্থাপনার ব্যাপক বর্ণনা দেন।
বিকেলে কৃষি বিজ্ঞানীরা এসটেটটি ঘুরে দেখেন এবং খুব কাছ থেকে কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানেন। তারা এই এসটেটের কৃষি ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত সর্বশেষ এবং আধুনিক সরঞ্জামাদিতে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন।
আবার প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ এম. এস. স্বামীনাথন তাঁর বক্তৃতায় ভারতের কৃষি বিকাশে বীর অরণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এদিন রাজ্যপাল এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রী শাস্ত্রীর উপদেষ্টা ডাঃ কালাম রাত্রের খাওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য সভাপতিত্ব করেন এবং ডঃ জগদীশ নারায়ণ রায় এর পরবর্তী সময়ে অধিভুক্ত হন এবং রাতের প্রধান অতিথি হিসাবে তাঁর বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারটি তিন দিন ধরে চলে এবং এটি একটি অসাধারণ সাফল্য হিসাবে স্মরণ করা হবে। আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানী এবং কৃষকরা এই সেমিনার থেকে অনেক কিছু শিখেছিলেন।