বৈশাখী
পরিচিতি
বৈশাখী উৎসব বাংলার নববর্ষের শুরু এবং বসন্তের আগমনকে স্বাগত জানায়৷ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসব যা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে উদযাপিত হয়৷ বৈশাখী উৎসবের ইতিহাস প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো এবং এটি বেশ কয়েকটি কিংবদন্তী এবং রীতিনীতির সাথে জড়িত৷
বৈশাখী উৎসবটি সাধারণত ১৫ এপ্রিল তারিখে পালিত হয়, যা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন৷ এটি হিন্দু এবং সিখ উভয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব৷ হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে এই দিনে ভগবান বিষ্ণু মৎস্য অবতারে প্রথম পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন৷ অন্যদিকে, সিখরা বিশ্বাস করেন যে এই দিনে তাদের দশম গুরু গুরু গোবিন্দ সিংহ খালসা পন্থ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷
উদযাপনের রীতিনীতি
- গঙ্গাস্নান: বৈশাখীর সকালে ভক্তরা পবিত্র গঙ্গা নদীতে স্নান করেন৷ এটি অশুভ আত্মাকে দূর করার এবং নতুন বছরটিকে শুদ্ধ এবং পবিত্রভাবে শুরু করার প্রতীক৷
- পূজা: লোকেরা ভগবান বিষ্ণু, লক্ষ্মী এবং গণেশের পূজা করেন৷ তারা প্রার্থনা করেন সুখ, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্যের জন্য৷
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: বৈশাখী উৎসবের সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন সংগীত, নাচ এবং নাটক অনুষ্ঠিত হয়৷
- পারিবারিক উদযাপন: লোকেরা তাদের পরিবারের সাথে উৎসবটি উদযাপন করে৷ তারা নতুন কাপড় পরেন, মিষ্টি খান এবং উপহার বিনিময় করেন৷
কিংবদন্তী এবং রীতিনীতি
বৈশাখী উৎসবের সাথে জড়িত বিভিন্ন কিংবদন্তী এবং রীতিনীতি আছে৷ কিংবদন্তী অনুসারে, একবার এক রাজা অরুণা নামে একজন ব্রাহ্মণের সাহায্য চেয়েছিলেন তার রাজ্যে শান্তি এবং সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে৷ ব্রাহ্মণ ১৫ এপ্রিল তারিখে তাকে একটি বিশেষ পূজা করতে বলেছিলেন৷ এই কাজটি করার পর, রাজ্যে শান্তি এবং সমৃদ্ধি ফিরে এসেছিল৷ সেই থেকেই বৈশাখী উৎসব উদযাপনের রীতি চলে আসছে৷
একটি অন্য কিংবদন্তী অনুসারে, বৈশাখী উৎসবের দিনে ভগবান বিষ্ণু মৎস্য অবতারে প্রথম পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন৷ কিংবদন্তী অনুসারে, একবার একটি রাক্ষস হিরণ্যকশিপু স্বর্গ এবং পৃথিবী দখল করেছিল৷ তার পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর একজন ভক্ত৷ প্রহ্লাদের ভক্তি পরীক্ষা করার জন্য, হিরণ্যকশিপু তাকে বিষ্ণুকে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে উপাসনা করতে বলেছিলেন৷ প্রহ্লাদ অস্বীকার করলেন৷ ক্ষুব্ধ হয়ে হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদের হত্যা করার চেষ্টা করলেন কিন্তু বিষ্ণু তাকে বাঁচিয়েছিলেন এবং হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করেছিলেন৷
আধুনিক যুগের বৈশাখী
আজকের দিনেও বৈশাখী উৎসব পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়৷ নতুন বছরের শুরুর সাথে জড়িত এই উৎসব রাজ্যের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে৷ বৈশাখীর দিনে সরকারি ছুটি থাকে এবং লোকেরা এই দিনটি তাদের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে উদযাপন করেন৷