বৈশাখের চোদ্দোশে একুশে
বৈশাখের চোদ্দোশে একুশে, বাংলার ইতিহাসের এক গৌরবময় দিন। এই দিনটি বাঙালির সাহস, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ হন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভাষা সৈনিকরা। তাদের শাহাদত দিনটিকে 'একুশে ফেব্রুয়ারি' হিসেবে পালন করে আসছে বাঙালি জাতি।
বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৪৭ সালের ১১ মার্চ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর। তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে বাঙালিরা প্রতিবাদ জানান। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাষার দাবিতে প্রথম সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেয়।
ভাষা আন্দোলন দিন দিন উত্তাপ বাড়তে থাকে। ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসে। পুলিশের গুলিতে প্রথম শহীদ হন শফিকুর রহমান। তার শাহাদতের পর দেশব্যাপী আন্দোলন আরও বেগবান হয়।
১৯৫২ সালের ১১ মার্চ ছাত্ররা জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে জমায়েত হয়। সেখানে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে আব্দুল জব্বার, শফিউর রহমান, আব্দুর রশীদ, আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন আহমেদ ও আজিজুল হকসহ আরও অনেকে শহীদ হন।
বৈশাখের চোদ্দোশে একুশেতে ভাষা সৈনিকদের শাহাদত দেশব্যাপী রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনমতকে নাড়া দেয়। ১৯৫৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বৈশাখের চোদ্দোশে একুশে বাঙালির আত্মত্যাগ, ত্যাগ ও সাহসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এদিনে সারা দেশে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এদিন সারা দেশে ছুটি পালন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বৈশাখের চোদ্দোশে একুশে শহীদদের স্মরণ করার মাধ্যমে আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের সবার উচিত তাদের আত্মত্যাগকে মনে রাখা এবং তাদের আদর্শকে অনুসরণ করা।
ভাষা একটি জাতির আত্মার প্রতীক। আমরা সবাইকে আমাদের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে এবং এর প্রচার-প্রসারে আমাদের সবার ভূমিকা রয়েছে।
বৈশাখের চোদ্দোশে একুশে বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি আমাদের বাংলার উত্তরাধিকার সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা সবাই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গর্বিত উত্তরাধিকারী। আসুন আমরা সবাই এই উত্তরাধিকারকে সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করি।