বৈশাখের বিশু উৎসব
আকাশের আড়ালে সূর্য যখন আস্তানায় যায়, তখনই শুরু হয় বৈশাখের বিশু উৎসবের তোড়জোড়। অন্ধকারকে আলোকিত করতে বাড়িতে বাড়িতে জ্বলে ওঠে কয়েক হাজার প্রদীপ। এঁকে বেঁকে রাস্তায় পোড়ে আগুন। আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে আতশবাজির ঝলকানিতে। কানে আসে ঢাকের গুমধ্বনি। আর হাতে কালোর থলি ভরে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ান তরুণীরা। সবার মুখেই “বিশু, বিশু” আওয়াজ।
বিশু কী?
বাংলার নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখের রাতে পালিত হয় বিশু উৎসব। বিশুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিংবদন্তি। কথিত আছে, বিহু নামে অসুরের দমনে দেবী কালী প্রচণ্ড যুদ্ধ করেন। সেই যুদ্ধের রক্ত থেকেই জন্ম হয় বিশু। আর তার সঙ্গী কালোর। দেবীর ঘাম থেকেই কালোরের জন্ম হয়েছে বলে বিশ্বাস।
বিশুর বার্তা
দুষ্টের দমন এবং শুভের বিজয়ই বিশুর বার্তা। বৈশাখের সেই পূর্ণিমা রাতে অসুরদের প্রতিরোধ করে দেবীর বিজয়ের আনন্দে প্রদীপ জ্বালানো হয়। অন্ধকারকে আলোকিত করা হয় আতশবাজির ঝলকানিতে। আর তরুণীরা গান গেয়ে, ঢাক বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আশীর্বাদ করে। তারাই “বিশু” সাজে।
বিশু কীভাবে পালন করা হয়?
বিশু পালন করা হয় কালোরের আশীর্বাদে। এই আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য তরুণীরা হাতে করে কালোর থলি নিয়ে ঘরে ঘরে ঘুরে আশীর্বাদ করেন। গৃহস্থরা তাদের পূজা করে, খেতে দেয়, টাকা দেয়। আবার কারও কারও বাড়িতে বিশুকে মেয়ে বলা হয়। অর্থাৎ বিশুরূপে সাজানো তরুণীদের মেয়ে মনে করে পূজা করা হয়। এই রকমে বিশু চলে রাতভর।
বিশুর তাৎপর্য
বাংলার সংস্কৃতিতে বিশুর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাংলার নববর্ষের প্রথম দিনেই এই উৎসব পালন করা হয় বলে এই রাতে বাড়িতে শুভলক্ষ্মীর আগমন ঘটে বলেও বিশ্বাস করা হয়।
বিশু ও টাকার সম্পর্ক
বিশুর সঙ্গে টাকার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। বিশুকে ঘরে এনে আশীর্বাদ করলে টাকা আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই রাতভর ঘরে ঘরে ঘুরে আশীর্বাদ করাই বিশুর মূল কাজ।
বর্তমানে বিশু
আগেকার তুলনায় এখন বিশুর রূপ বদলেছে। আগে যেখানে কেবল তরুণীরা বিশু সাজত, সেখানে এখন তরুণরাও বিশু সাজে। আবার অনেক জায়গায় বিশু পালন হয় গণপূজোর আয়োজন করে। তবে মূল আচার অনুষ্ঠান এখনও একই রয়ে গেছে।