বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়: ইতিহাসের উজ্জ্বল দিনগুলোর সাক্ষী




যদি আপনি ভাবছেন যে বাংলাদেশেই কেবল সোনারগাঁও-মহাস্থানগড়ই আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী, তাহলে ভুল করছেন। আমাদের পাশের প্রদেশ বিহারেরও আছে এরকম গৌরবময় ঐতিহ্য। আর সেই ঐতিহ্যের সাক্ষ্য হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নামের প্রাচীন ও বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।

রাজগীর থেকে প্রায় ৯৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ৫ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গুপ্ত আমলে। বৌদ্ধ ধর্মের উপর শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে আছে। ৭ম ও ১২শ শতাব্দীর মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হতো।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এতোটাই বিখ্যাত ছিল যে, এখানে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও ছাত্ররা পড়তে আসতো। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়ন করার জন্য চীন, কোরিয়া, জাপান, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, ফার্স ও পারস্য থেকে ছাত্ররা আসতো। এমনকি এখানে পড়ার জন্য মেগাস্থেনিস নামের এক গ্রিক লেখকও নালন্দায় এসেছিলেন।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীও ছিল ব্যাপক ও সমৃদ্ধ। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের উপর শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাকরণ, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা ও রেটরিকের মতো বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়া হতো। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি বিশাল গ্রন্থাগারও ছিল, যেখানে হাজার হাজার বই রাখা ছিল।

১২শ শতাব্দীতে তুর্কি আক্রমণে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু আজও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ দেখে বোঝা যায় যে, একসময় এটি কতোটা বিশাল ও সমৃদ্ধ ছিল।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষগুলো ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আজও এই প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি আমাদের শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করার শিক্ষা দেয় এবং আমাদের অতীতের গৌরব ও সমৃদ্ধির স্মরণ করিয়ে দেয়।

যদি আপনি কখনো বিহার ভ্রমণে যান, তাহলে অবশ্যই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষগুলো পরিদর্শন করবেন। এটি আপনার জন্য অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হবে।

এখানে কিছু টিপস রয়েছে যা আপনার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরকে আরও মজাদার করে তুলবে:

  • আপনার ট্যুরের জন্য প্রচুর সময় রাখুন।
  • সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শন করুন।
  • একজন গাইড ভাড়া করুন যিনি আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস ও স্থাপত্যের প্রকার সম্পর্কে বলতে পারবেন।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম পরিদর্শন করতে ভুলবেন না।
  • এলাকার আশেপাশে ঘুরে দেখুন। এখানে প্রচুর পুরনো মন্দির ও বিহার রয়েছে।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়: একসময়ের বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি
সফরের জন্য প্রয়োজনীয় সময়: 2-3 ঘণ্টা
সবচেয়ে ভালো সময়: সকাল বা সন্ধ্যা
প্রবেশ মূল্য: ভারতীয়দের জন্য 50 টাকা এবং বিদেশিদের জন্য 500 টাকা
কিভাবে যাবেন: রাজগীর থেকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় 95 কিমি। আপনি ট্যাক্সি বা বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যেতে পারেন।