ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে কিকেট আর ক্রিকেটই!
আমি একজন ক্রিকেট প্রেমী, আমার তো এ খেলাটায় হাঁটু পর্যন্তও পানি। এখন বলেন, মহিলা ক্রিকেট তো আমার পক্ষে স্বর্গ। আমার জীবনে এই ক্রিকেটই এমন উপলক্ষ্য, যেখানে আমার মনে হয়, আমি একজন মহিলা হওয়ায় খুশি।
আপনি ভাবছেন, আমি কী বলতে চাইছি? একটু হেসে নিন। আসলে আমাদের সমাজে সবসময়ই মনে করা হয়েছে, মেয়েরা খেলাধুলা বুঝে না। আমাদের আর সব স্বাভাবিক মানের বাইরে, অন্তত সেটাই একটা বহুল প্রচলিত ধারণা। কিন্তু এটা পুরোটাই ভুল। মেয়েরা খেলাধুলা বোঝে, এবং তার পাশাপাশি ক্রিকেটও তারা বোঝে। আর সেটা ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে আমরা সকলেই দেখেছি।
ইতস্ততঃ চোখে পড়ার মতন দুটি ঘটনার কথা বলি। প্রথমটা হল মন্দিরার স্ট্যাম্পড। দ্বিতীয়টা হল স্মৃতি মন্ধানার লেগসাইড সিক্স। দুটো ঘটনাই ম্যাচের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমার যেমন, তেমনি নিশ্চয়ই দর্শকদেরও ম্যাচের শেষ পর্যন্ত মনে থাকবে এই দুটি ঘটনা।
আর হ্যাঁ, এদের পাশাপাশি ম্যাচে তিনটি দুর্দান্ত ক্যাচও দেখা গিয়েছে। যার মধ্যে দুটিই স্ট্যান্ডিং ক্যাচ ছিল। এখন ব্যাখ্যা দিতে গেলে আমার হয়তো কঠিন সোস্যাল সায়েন্সের জ্ঞানও লাগবে। তবুও বলতে চাই, ওই ক্যাচগুলো একধরনের আভিজাত্য এবং স্ট্য়ালিশ ফিল্ডিংয়ের পরিচয়। এই শটগুলো দেখে মনে হল, যেন ক্রিকেট তাদের শরীরে-রক্তে মিশে আছে।
ব্যাট হাতে এবং বোলিংয়ে ভারতীয় মহিলা দলের খেলা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। এই দলের সামনে খেলতে নামলে আর কোনও দলই সাহস পাবে না, এটা নিশ্চিত। ভারতীয় দলের এই পারফর্ম্যান্স আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, যেখানে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়ের ক্রিকেট দলের গড় বেতন মাত্র 20,000 রুপি, সেখানেও এই মেয়েদের সম্মান করা উচিত। কারণ, তারা ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেছে।
আমি জানি, আমার কথার বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলবেন, তারা বলবেন, "এই ম্যাচ তো আসলে একদমই আকর্ষণীয় ছিল না।" তাদের কথাটা ঠিকই মিথ্যা নয়। কারণ, মেয়েদের ক্রিকেটকে অনেক সময়ই আমরা ততটা গুরুত্ব দিই না। ব্যাট হাতে ততটা আকর্ষণীয় শট মারতে পারে না তারা। তাদের বোলিংও সবসময় 140+ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার হয় না। কিন্তু ক্রিকেট মানেই তো কেবল শট এবং বোলিং নয়। ক্রিকেট হল তাদের কৌশল, তাদের নিরবতা, তাদের প্রতিযোগিতামূলকতা, সব মিলিয়ে। আর এই সবই ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে মেয়েদের মধ্যেও দেখা গেছে।
আমি আশা করছি, এই ম্যাচের পরে আমরা মেয়েদের ক্রিকেটকে আরও বেশি করে সমর্থন করব। তাদের ম্যাচে যাব, টিভিতে দেখব, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা তা হল, মেয়েদের ক্রিকেটকে স্বীকৃতি দেব। এই স্বীকৃতির জন্যই তাদের প্রয়োজন আছে আমাদের সমর্থন আর ভালোবাসার।