ভারতের অলিম্পিক গল্প শুরু হয়েছে ১৯০০ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আধুনিক অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে। দীর্ঘ ১২১ বছরের এই ক্রীড়াযাত্রায় সুখ-দুঃখের, হাসি-কান্নার, জয়-পরাজয়ের অসংখ্য গল্প লুকিয়ে আছে। ভারতে ক্রীড়া ও ক্রীড়াবীরদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, প্রশাসনিক সংস্কার ও খেলোয়াড়দের অক্লান্ত পরিশ্রম যুক্ত হয়ে ভারতকে আজ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে একটি শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠা করেছে।
হকি: ভারতের স্বর্ণযুগ১৯২৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত হকির মাঠে ভারতের রাজত্ব অব্যাহত ছিল। ছয়টি অলিম্পিক গেমসে টানা স্বর্ণপদক জিতে ভারতীয় হকি দল বিশ্বব্যাপী একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল। মেজর ধ্যান চাঁদের অধিনায়কত্বে ১৯২৮ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তিনটি অলিম্পিকে টানা স্বর্ণপদক জিতে ভারত হকি দল নিজেদের অদম্য জয়ের জয়গান শুনিয়েছিল বিশ্বকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০ ও ১৯৪৪ সালে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দল চতুর্থ স্বর্ণপদক জিতে নিজেদের আধিপত্যের বিষয়টি আরও একবার প্রমাণ করে। ১৯৫২ ও ১৯৫৬ সালে হেলসিঙ্কি ও মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারতের খেলোয়াড়রা টানা পঞ্চম ও ষষ্ঠবার স্বর্ণপদক জিতে দেশকে গর্বিত করে।
মিলখা সিং: ভারতের ফ্লাইং সিখভারতীয় অ্যাথলেট মিলখা সিং ভারতের সেরা অলিম্পিয়ানদের একজন। তিনি ‘ভারতের ফ্লাইং সিখ’ নামে পরিচিত। মিলখা সিং ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। মাত্র ০.১ সেকেন্ডের জন্য তিনি একটি পদক হাতছাড়া করেন। মিলখা সিংয়ের এই চতুর্থতম স্থানটি ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
পি.টি. উষা: ভারতের স্বর্নময়ীভারতীয় অ্যাথলেট পি.টি. উষাকে ‘ভারতের স্বর্নময়ী’ নামে অভিহিত করা হয়। তিনি ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের কিংবদন্তী। ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক থেকে শুরু করে তিনি টানা চারটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। তিনি ৪০০ মিটার হার্ডলসে দুটি বার একটি করে স্বর্ণপদক এবং ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন।
অভিনব বিন্দ্রা: ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক বিজয়ী২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে ভারতীয় শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রা ইতিহাস গড়েন। তিনি ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে স্বর্ণপদক জিতে ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক বিজয়ী হন। এই স্বর্ণপদকটি ভারতীয় খেলাধুলাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়।
সাইনা নেহওয়াল: ভারতের ব্যাডমিন্টন রানীভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়াল ভারতের ব্যাডমিন্টন রানী নামে পরিচিত। তিনি ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক থেকে টানা তিনটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। সাইনা ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জপদক জিতে একটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন।
সাক্ষী মালিক: ভারতের প্রথম মহিলা কুস্তি পদক বিজয়ী২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে ভারতীয় কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক পদক জিতে ইতিহাস গড়েন। তিনি ৫৮ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে ব্রোঞ্জপদক জিতে ভারতের প্রথম মহিলা কুস্তি পদক বিজয়ী হন। তার এই পদক ভারতের অনেক মেয়েদের অনুপ্রাণিত করে।
সত্তী গেওই: ভারতের প্রথম প্যারালিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী২০১৬ সালের রিও প্যারালিম্পিকে ভারতীয় জ্যাভলিন থ্রোয়ার সত্তী গেওই ইতিহাস গড়েন। তিনি মহিলাদের এইচ ১৫ ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে ভারতের প্রথম প্যারালিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী হন। তার এই স্বর্ণপদক ভারতে দিব্যাঙ্গ ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি নতুন পথ দেখায়।
ভারতের অলিম্পিক গল্প শুধুই পদক বা জয়-পরাজয়ের বিবরণ নয়। এটি হতাশা, লড়াই, দৃঢ় সংকল্প ও সাফল্যের একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস। ভারতীয় খেলাধুলা ও ক্রীড়াবিদদের এই গল্প আগামী প্রজন্মের অনুপ্রাণিত করবে। ভারতের অলিম্পিক যাত্রা অব্যাহত থাকুক, উঁচুতে উড়ুক ভারতের ত্রিরঙ্গা।