হিমালয়ের কোলে, দার্জিলিং এর প্রাণকেন্দ্র থেকে একটি আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে যেতে হয় ভূষি বাঁধ এর কাছে। জলের রাজ্য যেখানে প্রতিফলিত হয় পাহাড়ের সবুজ! কিন্তু এই সবুজ রত্নের গল্পটা এতোটা সুখের নয়।
ভূষি বাঁধের দিনান্তঃকয়েক বছর আগে, ভূষি বাঁধ ছিল পাহাড়ের বুকে এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। জলের নির্মলতায় আকাশ ও পাহাড়ের প্রতিফলন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করত। চারদিকে ছিল ঘন সবুজ বন, নীল পাহাড় এবং পাখির কিচিরমিচির।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের চারপাশে জনবসতি বাড়তে লাগল। অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে বাঁধের জল স্তরও দ্রুত বাড়তে থাকল। ফলে আশেপাশের এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ল।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে, কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় রইল না। জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে ভূষির চতুর্পার্শ্ববর্তী এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেল। ফসলনষ্ট হল। মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হল। পশুপাখিরাও এই দুর্যোগের শিকার হল।
ভূষি বাঁধের এই করুণ পরিণতি স্থানীয়দের মনে গভীর দাগ কাটল। তাদের স্বর্গতুল্য জায়গাটি এখন একটি দুঃখের প্রতীক।
ভূষি বাঁধের এই ঘটনার পর, কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে এই দুর্ঘটনার জন্য কেবলমাত্র অতিরিক্ত বর্ষণই দায়ী নয়। অপরিকল্পিত বসতি, বনাঞ্চল ধ্বংস এবং দূষণও এই দুর্যোগে ভূমিকা রেখেছিল।
বর্তমান অবস্থাবর্তমানে ভূষি বাঁধ এখন একটি পরিত্যক্ত জায়গা। বাঁধের জল কমে গেছে। চারপাশে আগাছা ও জলজ উদ্ভিদের আধিক্য। কখনো সখনো স্থানীয়রা এখানে আসে স্মৃতির স্রোতে ভাসতে।
ভূষি বাঁধের এই দুঃখের গল্প আমাদের প্রকৃতির প্রতি সচেতন হওয়ার শিক্ষা দেয়। আমাদের উচিত প্রকৃতিকে রক্ষা করা এবং এটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বসবাস করা। তাহলেই আমরা এই ধরনের দুর্যোগ এড়াতে পারব।