মাঠ
হাজার বছর আগের কথা। নামকরা কিছু মানুষের হয়ে মাঠে প্রাণ দিতে হয়েছিল কয়েক হাজার অপরিচিত মানুষকে। সেটা খেলা ছিল না, লড়াই ছিল। ঠিক জানা যায় না কী ছিল সেটা, কেন এমন হল, কী চেয়েছিল তারা। কিন্তু খেলায় হারের গল্প যেন চিরজীবন রয়ে গিয়েছে আমাদের মনে। ভিতরে ভিতরে হয়ত সেই অনুভূতিটা কাজ করে আজও। নয়ত কেন হারের পর এমনভাবে ভেঙে পড়ি? সেই হারে কী যেন না বুঝেও ভাঙে কিছু একটা, ভিতরে একটা শূন্যতা। জয়ের প্রাপ্তি কিন্তু এমন নয়। জয় করলে ভাঙার ভয় থাকে না, খুশির শেষও হয় না। হারের বেদনা হয়ত আর এক অনুভূতি। ওরকম কষ্ট বোধ করি কোনো অসুখেও হয় না।
তোমার আমার মতো সাধারণ মানুষের হয়ে কেউ যখন মাঠে নামত, মনে হত যেন নিজেরাই লড়াই করছি। মাঠে আমাদের প্রতিনিধি হয়ে কেউ হেরে গেলে, আমাদেরও হেরে যাওয়ার মতো লাগত। জয় করলে আমাদেরও জয় হত যেন। এমনই অনুভূতি হত আমাদের। খেলায় জয়-পরাজয় কিংবা সফলতা-ব্যর্থতা ভাগ করে নেওয়াই আসল মজা। তবে হারলে আমাদের ভাঙার মতো কষ্ট হলেও, জিতলে তেমন আমোদ হয় না। কেন? কারণ, জয় একার ব্যক্তিগত। কিন্তু হার সবার। আর সবার হওয়ায় ঠিক যেন আমাদেরও।
মাঠে খেলা দেখতে যাওয়া মানে শুধু ফুটবল দেখতে যাওয়া না, বেশ অন্য এক অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়া। এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব কিছু ভুলে যাওয়া। নিজের জীবনের সব হিসাব রাখা, তারপর হেরে যাওয়ার দুঃখ, জিতের আনন্দ। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যাপন করা হয় সব। তাই আমরা এমনভাবে ভেঙে পড়ি, এমনভাবে খুশি হই।
আমরা কীভাবে খেলা দেখি, কেন এমনভাবে খেলা উপভোগ করি, সেটাই হয়তো আমাদের জীবনধারার প্রতিচ্ছবি। হারলে দুঃখ পাই, জিতলে খুশি হই। যা কিনা জীবনে হওয়া উচিত তাই। জীবনও তো একটা খেলা। জয়ের পরাজয়ের হিসাব রাখতে হয়। আবার হার মানাও জানতে হয়। কিন্তু সবটাই নিজের। হারের কষ্ট নিজের, জয়ের আনন্দও নিজের। মাঠে দেখি সবাইকে একসঙ্গে খুশি হতে, দুঃখে ভাঙতে। জীবন কি ঠিক এমন না? কখনো হারতে হয়, কখনো জিততে হয়। তাই মাঠে এমন একটা অনুভূতি কাজ করে, যা কিনা আমাদের জীবনে হওয়া উচিত।