মেধা পাটকর: ভারতের জল ও বন আন্দোলনের অগ্রদূত




মেধা পাটকর হলেন একজন অসাধারণ ভারতীয় সামাজিক কর্মী, যিনি তাঁর জল ও বন আন্দোলনে অবদানের জন্য বিখ্যাত। তিনি "নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন" এবং "নদী সংযোগ আন্দোলন" এর মতো গণ আন্দোলন চালিয়েছেন, যা দেশের জলীয় সম্পদ রক্ষার জন্য লড়াই করেছে। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা তাঁকে ভারতের অন্যতম সম্মানিত পরিবেশবাদী করে তুলেছে।

মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করা মেধা পাটকর একজন আইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তবে, নর্মদা নদীর ওপর সরকারের বড় বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে একটি কেসে কাজ করার সময়, তিনি স্থানীয় মানুষের দুর্দশা দ্বারা মর্মাহত হন যারা তাদের জমি ও জীবনবৃত্তি হারানোর মুখে ছিল। তা থেকেই তিনি দরিদ্র ও মার্জিনালাইজড মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করার জন্য আইন অভ্যাস ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

১৯৮৫ সালে, মেধা পাটকর নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ বিরোধী আন্দোলন হয়ে ওঠে। আন্দোলনটি সরকারের ৩০টি বড় বাঁধের পরিকল্পনা বাতিল করতে সফল হয়েছিল, যা লক্ষ লক্ষ স্থানীয় মানুষের জমি ও জীবনবৃত্তির উপর প্রভাব ফেলত।

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের সাফল্য মেধা পাটকরকে আরও আন্দোলন শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। ২০০০ সালে, তিনি নদী সংযোগ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশের নদীগুলিকে সংযুক্ত করার এবং জল সংকটের সমাধান করার লক্ষ্যে কাজ করে। এই আন্দোলনটি গঙ্গা, যমুনা এবং ব্রহ্মপুত্র সংযোগ করার একটি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে, যা ভবিষ্যতে জল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মেধা পাটকর শুধুমাত্র তাঁর নেতৃত্বের জন্যই নয়, তাঁর সাহস ও দৃঢ়তার জন্যও পরিচিত। তিনি বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু তিনি কখনই তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তাঁর কাজ ভারত এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে, এবং তিনি বেশ কয়েকটি সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে সঠিক জীবনপন্য পুরস্কার এবং গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কার।

মেধা পাটকরের আন্দোলনগুলি শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্যও লড়াই করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে প্রত্যেকেরই জল ও বনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অধিকার রয়েছে এবং কোনও উন্নয়ন প্রকল্প তাদের সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ হওয়া উচিত নয়।

মেধা পাটকরের কাজ ভারতের জলীয় সম্পদ রক্ষা এবং আরও সুষ্ঠু ও টেকসই সমাজ গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে অবিরত রয়েছে।