মনিকি ম্যান




একটা সময় ছিল যখন কলকাতার রাস্তায় গোঁফদাড়ি, পাঞ্জাবি আর ট্রাউজার পরা এক জাদুকর শত শত লোক জড়ো করে ফেলতেন। কখনও হাওয়ায় কিছু মেলাতেন, কখনও মুখ থেকে রঙিন রুমাল বের করতেন। তাঁর হাতদুটো ছিল আসল অস্ত্র। ছোট্ট ছোট্ট হাতখন্ডে তিনি যা যা করতেন, তা যেকোনো যাদুকরকে হার মানাতো। ঠিক বুঝতেই পারতাম না কীভাবে এত সহজে তিনি এত বিস্ময়কর কাজগুলো করে ফেলেন। যাদু দেখতে যাঁদের নিজেরা একটু জাদু জানেন, তাঁরাও তাঁকে দেখে হতভম্ভ হয়ে যেতেন কী করে তিনি এত দ্রুত নিখুঁতভাবে হাতের খেলা খেলেন!

আমার তখন বয়স বোধহয় সাত-আট। স্কুলে জানতাম যে, তাঁর নাম প্রয়াগ বিশ্বাস। কিন্তু কলকাতার রাস্তায় যে মানুষটি দিনের পর দিন হাজার হাজার লোকের মুখে হাসি ফোটাতেন, সকলের কাছে তিনি ছিলেন 'মনিকি ম্যান'। তোমাকে কি মনে আছে এই মানুষটিকে? সেই সময় কলকাতা শহরের রাস্তাঘাটে তাঁর নাম ছিল না জানে কেউ। তিনি মনিকি ম্যান, তাঁর পরিচয় এটাই।

  • যদি তোমার বয়স 50 বছরের বেশি হয়, তাহলে তুমি নিশ্চয়ই জানো 'মনিকি ম্যান'-কে।
  • আর যদি তোমার বয়স 50 বছরের কম হয়, তাহলে বলে রাখি, কলকাতায় এক সময় এক জাদুকরের দৌলতে রাস্তায় যানজট হতো। হ্যাঁ, মুখের থেকে রঙিন রুমাল বের করা সেই জাদুকর।

মনিকি ম্যান হলেন প্রয়াগ বিশ্বাস। মানুষকে অবাক করে দেওয়ার ক্ষমতার কারণে তিনি এই নামে খ্যাত ছিলেন। তাঁর ঝাঁকুনিদার হাতের খেলা দেখে সকলে হতবাক হয়ে যেতেন। আজ থেকে 20 বছর আগে কলকাতার রাস্তায় তাঁকে দেখা যেত। রাস্তার জনসমাগমের মাঝখানে তিনি তাঁর জাদুর বাক্স খুলতেন আর শুরু হতো যাদুর খেলা। শহরের কোন কোন জায়গায় তিনি সবচেয়ে বেশি দর্শক জড়ো করতেন, সেটা জানতাম। তাই তাঁর জাদু দেখার জন্যে সেই ভিড়ের মধ্যে আমিও ঢুকতাম।

তিনটে কাপ আর কয়েকটা জাদুর বল হল তাঁর জাদুর মূল উপকরণ। একটি কাপের নীচে তিনি বল লুকাচ্ছেন, আর সেটাকে ঘুরিয়ে দেখানোর পর গায়েব করে দেন। শুধু এই কাজটিই নয়, তিনি বলগুলো হাত থেকে হাতে উড়িয়ে ফেলতেন, হাওয়ায় কাপ্তেন হয়ে ভাসিয়ে দিতেন। মুখ থেকে রঙিন রুমাল বের করতেন, টাকার বদলে কাগজ দেখাতেন। তাঁর খুব সহজ কিন্তু খুব দ্রুত হাতের খেলা দেখে হাজার হাজার মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যেতেন।

আমি তখন ভাবতাম, মনিকি ম্যানের আসল জাদু আসলে এই হাতের দ্রুত খেলাটায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তিনি হাত দিয়ে এতকিছু করে ফেলেন যে, কী ঘটেছে তা আমরা বুঝতেই পারতাম না। তিনি এমন একটা অদৃশ্য জাদু দেখাতেন যে, তাঁর ডান হাতে একটা বল থাকবে, আর একই সময়ে সেই বলটি তাঁর বাম হাতে চলে আসবে। এখন এইসব জাদুকারীরা শুধু টেলিভিশনেই দেখা যায়। রাস্তায় আর তেমন জাদুকর দেখা যায় না। সেই সব দিনগুলো মনে হলে এখনও বিস্ময় হয়!