মন রাখলে অলিম্পিকে তীর চলবে




বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই তীর নিক্ষেপকে শুধু খেলাই নয়, যুদ্ধের ময়দানেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। অনেক আগের কথা, তখন কুশ আর বাণ ছিল লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। কিন্তু সময় বদলের সঙ্গে তীর নিক্ষেপকে কেবলমাত্র খেলারই অঙ্গ করা হয়েছে। আর সেই খেলায় এক সময় এই তীর এমন সব সাফল্য এনে দিয়েছে আমাদের দেশকে, আজও তা অনুপ্রেরণা যোগায়। কিন্তু কিছুদিন আগেও একটা সময় এমন এসেছিল যখন মনে হচ্ছিল তীর নিক্ষেপের দিন শেষ। তবে আবারও নতুন প্রতিভা এসেছে সামনে। তাদের নিয়েই আশা জাগছে ফের মেডেল দেখার। আর তাই এই অলিম্পিকেও তীর নিক্ষেপ নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে কম নয়।
আগামী বছর প্যারিসে হতে চলা অলিম্পিকে তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় এ বার ভারতের পুরুষ দল গ্রুপ ইভেন্টে অংশ নিতে পারে। তবে একক বিভাগে প্রতিযোগিতার জন্য এখনও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। প্রতিযোগিতায় অলিম্পিক কোটা জেতার শেষ সুযোগ কলম্বিয়ার মেডেলিনে চলতি মাসেই অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপ ফাইনাল। তবে সেখানে ভারতের পুরুষ তীরন্দাজরা কেমন পারফর্ম করেন, তা-ই এখন দেখার।
এই প্রতিযোগিতায় রাজত চৌহান, অতনু দাস, প্রবীণ যাদব সহ অভিজ্ঞরা থাকছেন। তাঁদের পাশাপাশি রয়েছেন তরুণ তীরন্দাজ অজয় নেগি। রাজত-অতনু দু’জনেই বেশ কিছু সময় আগেই দলে জায়গা পেয়ে নিয়েছেন। এ বার প্রবীণ এবং অজয়ের উপরেই রয়েছে ভরসা। যদিও বিশ্বকাপ ফাইনালে ভালো ফল করাটা কিছুটা কঠিন। কারণ সেখানে গোটা বিশ্বের সেরা তীরন্দাজদের মুখোমুখি হতে হবে।
অন্য দিকে, ভারতের মহিলা তীরন্দাজ দলের গ্রুপ ইভেন্টে অংশ নিশ্চিত। পাশাপাশি একক বিভাগেও দুই তীরন্দাজ ইতিমধ্যেই কোটা নিশ্চিত করে ফেলেছেন। তাঁরা হলেন দীপিকা কুমারী এবং আঙ্কিতা ভাগবত।

ভারতের তীরন্দাজরা সব সময়ই বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সেরাদের মধ্যে একজন। বিশ্বকাপ, কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমসের মতো প্রতিযোগিতায় তাঁরা সব সময়ই ভালো ফল করেছেন। এ বারও সেই আশা জাগছে। তবে এ বারের অলিম্পিকে তাঁদের সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁদের অভিজ্ঞতা। তীর নিক্ষেপে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা মানসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সেরা হলেও দুর্বলতা রয়েছে। তা ভারতের তীরন্দাজদেরও। তাঁদের একটা সংখ্যালঘু অংশ, বিষেশ করে যুবকরা এখনও মানসিক চাপ সামলাতে পারে না। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো বড় প্রতিযোগিতাগুলিতে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। যদিও এ বার অলিম্পিকে যাঁরা যাচ্ছেন তাঁরা সকলেই বেশি অভিজ্ঞ। তাঁদের এই সমস্যাটা নিয়ে ভাবতে হবে না।

ভারতের তীরন্দাজদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে বিশেষত্ব রয়েছে সেটা হল তাঁদের নিয়মিততা। বিশ্বের অন্য কোনও দেশের তীরন্দাজরা এত নিয়ম করে তীর নিক্ষেপ করতে পারেন না। ফলে তাঁরা বিশ্বের কোনও প্রতিযোগিতায় যাওয়ার পরে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক কোনও কারণে খারাপ পারফর্ম করার সম্ভাবনা খুবই কম।

ভারতীয় তীরন্দাজদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী দল হল দক্ষিণ কোরিয়া। ৬৪ বছরের অলিম্পিক ইতিহাসে তীর নিক্ষেপে সবচেয়ে বেশি সোনা জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া। তাঁরাই এ বারও সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ভারতের। এর পরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে তীর নিক্ষেপে বিশ্বের নম্বর ১ তীরন্দাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যাডি এলিসন। এ বছর বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি স্বর্ণপদক জিতেছেন।
তবে এ ছাড়াও বেশ কিছু দেশের তীরন্দাজরাও এ বার অলিম্পিকে পদকের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছে জাপান, তুরস্ক, ইতালি এবং ফ্রান্স।

ভারতের তীরন্দাজরা এ বার অলিম্পিকে পদক জেতার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের একক বিভাগে দীপিকা এবং আঙ্কিতার উপরেই রয়েছে প্রত্যাশার ভার। দীপিকা সবচেয়ে অভিজ্ঞ ভারতীয় তীরন্দাজ। বিশ্বকাপ এবং কমনওয়েলথের মতো প্রতিযোগিতায় বেশ কিছু মেডেল তিনি জিতেছেন। তার কাছেই এ বার অলিম্পিকে সোনা জেতার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরে রয়েছে আঙ্কিতার নাম। তিনিও একজন অভিজ্ঞ তীরন্দাজ। এ বছর বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন। পুরুষদের একক বিভাগেও ভারতের প্রবীণ যাদবের উপরে রয়েছে প্রত্যাশার ভার।
তবে একক বিভাগে যেমন প্রত্যাশা রয়েছে, গ্রুপ ইভেন্টে তা কিছুটা কম। এর কারণ গ্রুপ ইভেন্টে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তবে ভারতীয় তীরন্দাজরা তা কাটিয়ে উঠতে পারলে পদক জেতার