মামের কুসুমী পূজা
বসন্ত এলেই আসে ফুলের রঙিন উৎসব। আর এ উৎসবে নতুনবছরের শুরুতেই বিশেষভাবে পালন করা হয় মামের কুসুমী পূজা। এই পূজার আরেকটি নাম অর্চনা যা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ প্রচলিত। বসন্তকালে মামের কুঁড়ি বা পুষ্পমঞ্জরী সংগ্রহ করে মামের বৃক্ষের তলায় বা মন্দিরে পূজা করা হয়। এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পূজা।
মামের কুসুমী পূজার মাহাত্ম্য
মামের কুসুমী পূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনী। পুরাণ মতে, একদা দেবতারা অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিষ্ণুর কাছে আশ্রয় নেয়। বিষ্ণু তখন অসুরদের বধের জন্য নরসিংহ অবতার ধারণ করেন। নরসিংহের গায়ের রং ছিল হলুদের মতো। তাই বিষ্ণুকে হলদে রঙের ফুল পছন্দ। মামের কুসুমী হলুদ রঙের হওয়ায় তাই নরসিংহের পূজায় মামের কুসুমী অর্পণ করা হয়।
আরেকটি কাহিনী অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে স্বর্গ থেকে বৃষ্টি হয়েছিল মামের ফুলের। তাই মামের কুসুমী পূজাকে শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসবের অনুষঙ্গ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এছাড়া, মামের কুসুমী পূজাকে কামদেবের আরাধনা হিসেবেও মানা হয়। বিশ্বাস করা হয়, মামের কুসুমী পূজা করলে কামদেব প্রসন্ন হন এবং পূজারীকে অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করেন।
মামের কুসুমী পূজার উপকরণ
মামের কুসুমী পূজা করতে হলে কিছু উপকরণের প্রয়োজন হবে। সেগুলো হলো:
- মামের কুঁড়ি
- দুর্বা ঘাস
- বেলপাতা
- আতপ চাল
- ফুল
- নারিকেল
- হলুদ
- সিঁদুর
- আরতির সামগ্রী
মামের কুসুমী পূজার বিধি
মামের কুসুমী পূজার বিধি খুবই সহজ। এই পূজা যে কোনো শুভ মুহূর্তে করা যায়। পূজার আগে একটি পবিত্র স্থানে একটি বেদি তৈরি করতে হবে। বেদির ওপর একটি কলস রাখতে হবে এবং তাতে জল ভরে নিতে হবে। এরপর কলসের মুখে মামের কুঁড়ি সাজিয়ে রাখতে হবে। কলসের পাশে দুর্বা ঘাস, বেলপাতা, আতপ চাল, ফুল, নারিকেল, হলুদ এবং সিঁদুর রাখতে হবে। পূজা শুরু করার আগে গণেশ এবং লক্ষ্মীর পূজা করতে হবে। এরপর কলসের কাছে বসে মামের কুসুমীর মন্ত্র জপ করতে হবে। মন্ত্র জপ করার পর আরতি করা হবে এবং প্রসাদ বিতরণ করা হবে।
মামের কুসুমী পূজার শুভ ফল
বিশ্বাস করা হয় যে, মামের কুসুমী পূজা করলে সব মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। এই পূজা করলে সংসারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে এবং অর্থনৈতিক সমস্যা দূর হয়। এছাড়া, মামের কুসুমী পূজা করলে সন্তান প্রাপ্তির কামনাও পূরণ হয়।