মার্কিন নির্বাচন ফলাফল: তারিখ
সম্প্রচারের দমকা হাওয়ার মতো মার্কিন নির্বাচন প্রচারও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। কি প্রার্থী তিন তিন করে গুনে খুঁজছে তার উঠতি বেলা আর কি প্রার্থী খাচ্ছে হাতে পায়ে ধরে ভোট ভিক্ষে। ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করা মুশকিল হলেও সামান্য কিছুটা আঁচ করা যায় কিছু ভোটের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে। কারণ প্রতিটি নির্বাচনই অনেকটা অতীতের প্রতিচ্ছবি বহন করে।
ঘটনাচক্রে এর আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি ছিল ২০২০ সালে, সেই ফলাফলটি ছিল নাটকীয় ও চমকপ্রদ। যেখানে রিপাবলিকানদের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেছিলেন ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী জো বাইডেন। কিন্তু এই নির্বাচনে সেই জয়ী দলই আবার যথেষ্ট ঝুঁকিতে। কারণ এরইমধ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি গ্যালপ পোলে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাটরা তাদের ভোট ব্যাংকে আর আগের মতো আস্থাশীল নেই। এখন যদি রিপাবলিকানদের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার মনোনয়ন পান এবং ডেমোক্র্যাটরাও সফলভাবে মনোনয়ন দিতে পারেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে; তাহলে আমরা হয়ত ভয়ঙ্কর একটি নির্বাচনী লড়াইয়ের সাক্ষী থাকতে চলেছি।
সাধারণ নিয়ম হলো, প্রেসিডেন্টের প্রথম মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ভালো থাকে তাহলে তিনি আবার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমেরিকানদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। গ্যালপের সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে মাত্র ৩০% আমেরিকান দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট। যা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার প্রাক্কালে চিত্রটির চেয়ে অনেক কম। এমনকি এটি ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার প্রাক্কালে অর্জন করা দেশের অর্থনৈতিক সন্তুষ্টির চেয়েও কম। তাইয়ো যদি রিপাবলিকানরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেন তাহলে তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়েই প্রচার চালাতে হবে। তাই এই মুহূর্তে ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তবে কি বলা যায় ডেমোক্র্যাটরা টানা দুবার বিজয়ের দাবী করতে পারবেন? এরকম ঘটনা অতীতেও ঘটেছে কিন্তু তা খুবই কম। যেমন, ১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ বুশ সিনিয়রকে পরাজিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে তিনি আবার নির্বাচিত হন। তিনিই সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি দুবার টানা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
তবে এখনকার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। কারণ বর্তমানে আমেরিকায় ক্রমবর্ধমান দুই পক্ষের মেরুকরণ এবং বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। এমনকি এই পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় ১৯৬৮ সালের নির্বাচনী প্রচারের বিষয়বস্তুকে। যেখানে বিদ্যমান প্রেসিডেন্টকে বিরোধী প্রার্থীরা সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে, সরাসরি তলোয়ার তুলেছিলেন। ফলে ভোটারদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক ভোট কাটারো হয়েছিল। এমনকি সেই নির্বাচনটিও জয়লাভ করেছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী নিক্সন।
তাই যদিও ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন হলেও এই ব্যাপারটি মনে রাখা দরকার যে এর আগেও মূল ভোটের দিনের আগের দিন পর্যন্ত প্রার্থীদের মধ্যে দূরত্ব ছিল অনেক কম। এমন কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আজ অবধি দুবার এবং দুবারই জয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী।