যেআবহাওয়া দিল্লীকে আটকে রাখে
দিল্লির আবহাওয়া কথায় কথায় কক্স বাজারের চেয়েও ভালো। কিন্তু হঠাৎ এ কি? সকালের ঘুম ভাঙল, উঠে দেখি বৃষ্টি পড়ছে। এযে মোটেও ঠিক হলো না। আজ তো বান্ধবীর বিয়ে আর এ অবস্থা? বৃষ্টির প্রচণ্ড গর্জন, মেঘের ঘটাঘট, রাস্তায় ভয়ানক জ্যাম। অথচ ট্রাফিক সিগন্যালে অটল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সামনে এক দল মেয়ের কথায় কান পাতলাম। আজ তাদের বান্ধবীর বিয়ে। আগের দিন একই আবহাওয়ায় বিয়েটা পিছিয়ে গিয়েছিল। তাদের অন্য কোনো চিন্তা নেই, শুধু চিন্তা আবহাওয়া নিয়ে।
দিল্লিতে যে বৃষ্টি হয় তা দেখে বোঝাই যায় না এ বৃষ্টি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ। আবহাওয়ার তো বোধহয় মেজাজটা একটু খারাপ। তাই বৃষ্টির সাথে ঝড় বয়ে যায়। এই দিল্লির বৃষ্টিতে ভিজলে আর সুস্থ থাকা যায় না। হাঁচি কাশি সর্দি জ্বর। আবার বৃষ্টি না হলে? তখন আবার দুর্ভোগ। দূষণে শ্বাস বন্ধ। গরমে গায়ে আগুন লাগার জোগার। তবু বৃষ্টি হলে আমরা মেতে উঠি। বৃষ্টি হলেই তো ঠান্ডা আবহাওয়া হবে, আবার ঘরের বারান্দায় বসে বৃষ্টির পানি উপভোগ করা যাবে। দিল্লির রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে সাঁতার কাটার মজাই আলাদা। কিছু কিছু এলাকায় কোনো পয়োনাশের ব্যবস্থা নেই তাই বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে সেখানে ডুগি আছে। সেখানে সাঁতার কাটার মজাই সবচেয়ে বেশি।
এতো গেল দিল্লির বৃষ্টি নিয়ে। এবার আসি দিল্লির গরমের কথা। দিল্লির গরম ভীষণ ভয়ানক। যদি কারো বান্ধবী দিল্লির বাসিন্দা হয় তাহলে দিল্লি এলেই তাকে শুনতে হবে কত টুকু গরম। তার প্রকৃত ব্যাখ্যাটা সত্যি খুবই কষ্টকর। দিল্লির গরমের তীব্রতা কথায় বোঝানো সম্ভব না। কিছু দিন আগে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রোদের প্রখরতায় জানালা বন্ধ করে রেখেছি। জানালা খুলতেই আমার মনে হলো কেউ একটা আগুন জ্বেলে আমার মুখের সামনে ধরে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গায়ে অসহ্য জ্বালাপোড়া অনুভব করতে শুরু করলাম। তাই এখানে থাকতে গেলে গরমের সাথে তাল মিলিয়ে নিতে হয়। নইলে তো দিল্লির গরমে পুড়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।
আবহাওয়ার হাত ধরে এবার আসি দিল্লির শীতের কথা। দিল্লির শীতও বেশ জমে। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। শীতের রাতে বাইরে বেরোলে অনুভূত হয় যেন হিমালয়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। ঘর থেকে বের হতেও ভয় হয়। এমন কিছু কিছু দিন আছে যেদিন কম্বলের মধ্যে লুকিয়ে থাকার ইচ্ছে হয়। শীতের রাতে রাস্তায় বের হওয়া মানে হিমশিম খাওয়া। তবে এই শীতের রাতেই যদি কেউ আপনার হাতটা শক্ত করে ধরে আর আস্তে আস্তে আপনার কাছে আসে তাহলে এই শীতের রাতটা হয়ে যায় অন্যরকম এক মুহূর্ত।
এইভাবেই দিল্লির আবহাওয়া আমাদের জীবনে এসে মিশে যায়। দিল্লির এই আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের এখানে দিন কাটাতে হয়।