যখন ওয়ানাড প্রমাণ করল: 'শক্তি অস্ত্রে নয়, মানুষের মনে'




যখন কল্পনা বাস্তবে রূপ নেয়, তখন হয়তো এটাই বোঝায় বিশেষ কিছু ঘটতে চলেছে। সেই রকমই দেখা গেছে কেরলের ওয়ানাডের উপনির্বাচনে। যদিও নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধীরা দাবি করছিল, এটা শুধুই সহানুভূতির ঢেউ, কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর স্পষ্ট হয়ে গেল, ওয়ানাডের মানুষের ভোট ছিল তাদের অন্তরের কণ্ঠস্বর।

প্রিয়ংকা গান্ধীর এই দুর্দান্ত জয় যে কেবল কংগ্রেসের জয় নয়, এটা গণতন্ত্রের জয়, একজন মহিলার জয়। এক দিকে দাঁড়িয়েছিল হিংসা আর ভয়ের রাজনীতি, আর অন্য দিকে দাঁড়িয়েছিল আশার রাজনীতি। ফলাফল স্পষ্ট। এটা কেবল ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটা বার্তা।

সীতারাম কেশরী থেকে প্রিয়ংকা গান্ধীর জয়যাত্রা

ওয়ানাডের উত্তরসূরী হিসাবে প্রিয়ংকা গান্ধীর এই জয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সীতারাম কেশরীর অবদানও। একটা সময় ছিল, যখন এই পাহাড়ি এলাকায় কংগ্রেসের উপস্থিতি ছিল তলানিতে।
১৯৮৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সীতারাম কেশরীই প্রথম কংগ্রেসকে ওয়ানাডে জেতান। তারপর তিন বার টানা তিনিই নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত কেশরীই ছিলেন এখানকার প্রতিনিধি। কিন্তু ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির পিনারায়ি রাজিবের কাছে পরাজিত হয়েছিল কংগ্রেস।

প্রিয়ংকা গান্ধীর এ বারের নির্বাচনী জয়ে সীতারাম কেশরীর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি জানতেন, ওয়ানাডের মানুষের মন জয় করতে হলে এখানে নিয়মিত আসা লাগবে। তাঁর নিজেরও এই পাহাড়ি এলাকার সঙ্গে একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। কারণ কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনের সময় অনেক বার ওয়ানাড আসতেন তিনি।

তাই ২০১৬ সালে কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রিয়ংকা নিয়মিত ওয়ানাড সফর করতেন। এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তিনি ঘুরেছেন, মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। এমনকী তাঁদের বাড়িতে খেয়েছেন, গল্প করেছেন। তাঁর এই একান্ত সভাগুলিতে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

এই সবক'টিই প্রিয়ংকার জন্য কাজে লেগেছে। ওয়ানাডের মানুষ জানতেন, এই মহিলা তাঁদের একজন। তিনি তাঁদের মন বুঝতে পারেন। কাজেই এ বারের নির্বাচনে প্রিয়ংকা যেভাবে জিতেছেন, তাতে শুধুই কংগ্রেসের, প্রিয়ংকারই আনন্দ নয়, সারা দেশের গণতন্ত্র-প্রেমী মানুষেরও আনন্দ আছে। একটা ঘেয়ে যাওয়া গাছ আজ নতুন করে সবুজ হয়ে উঠল। এই নতুন সবুজে যেন সারা দেশের জন্যই আশার বার্তা রয়েছে।

'অধিকারের নয়, সততার রাজনীতি'

প্রিয়ংকা গান্ধী বলেছেন, তিনি উত্তরপ্রদেশ ভোটের সময়ই ওয়ানাডে প্রচার করতে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, ওয়ানাডে তাঁকে অনেক কিছু শিখতে হবে। বিশেষ করে এটাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সফলতা আসে কেবল মানুষের সঙ্গে সংযোগ থেকে।

তিনি ওয়ানাডে কয়েকটি মঞ্চে ভাষণ দেন। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা। তিনি অধিকারের নয়, সততার রাজনীতি করতে চেয়েছেন। তিনি মানুষের কাছে তাঁর ভাবনা ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি তাঁর লক্ষ্য সম্পর্কে কথা বলেছেন।

তিনি ভোটারদের কাছে অনুরোধ করেছেন, তাঁকে বিজয়ী করার জন্য তারা উত্তরপ্রদেশে তাঁর জন্য প্রচার করুন। তিনি বলেছেন, তিনি জানেন যে তাঁর জয় উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। তিনি জানেন যে তাঁর জয় কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে।

প্রিয়ংকা গান্ধির এই ভোটজয় মেয়েদের ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসাবেও দেখা হচ্ছে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, একজন মহিলাও যে রাজনীতিতে সফল হতে পারেন। তিনি রাজনীতিতে মহিলাদের সশক্তিকরণের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

ভোট গণনার দিন

ভোট গণনার দিন সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে ভিড় জমান শুরু করেন রাজনৈতিক নেতা এবং সাংবাদিকরা। সকলেই খুব উৎসাহী ছিলেন। ভোট গণনা সকাল 10টায় শুরু হওয়ার কথা। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সকাল 8টার আগে থেকেই লাইনে দাঁড়ান মানুষজন। সকলেরই জানতে ইচ্ছে ছিল, ওয়ানাডে কে জিতলেন?

সকাল 10টায় ভোট গণনা শুরু হয়। সর্বপ্রথমে গণনা করা হয় পোস্টাল ব্যালট। এরপর শুরু হয় ইভিএম এর কাউন্টিং। ভোট গণনা চলতে থাকে। একের পর এক রাউন্ড পেরিয়ে যায়।

রাউন্ডে রাউন্ডে প্রিয়ংকা গান্ধীর জয়ের ব্যবধান বাড়তে থাকে। যদিও বিজেপি প্রার্থী