যখন জলপাই কালো রং হয়ে যায়: বার্ধক্যের গল্প




সময়ের অবিরাম চাকায় ঘুরতে ঘুরতেই কখন যে জীবনের বসন্তকাল পিছনে ফেলে এসেছি, তা বোঝাই যায়নি। যৌবনের রংবেরঙের জলপাইগুলি কবে আঁধার হয়ে গেল, তাও খেয়াল হয়নি।
যখন কেশের কালচে রং ধীরে ধীরে সোনালী হতে শুরু করে। চোখের কোনে ছোটখাটো ভাঁজগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠে। আর হাতের শিরাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে,
তখনই বুঝি, হায়, বার্ধক্যের ছায়া নেমে এসেছে আমার ওপরও।

বার্ধক্য কী, কেমন? অনেকটা বৃষ্টির পরের মেঘ কাটা আকাশের মতোই, যখন রোদ সরে যায় কিন্তু সূর্যচাঁদ আর হারিয়ে যায় না। একধরনের নিস্তব্ধতা আসে। প্রকৃতির পাল্টে যাওয়া রূপের মতোই আমাদের জীবনেও আসে বার্ধক্য। নিজের মধ্যে একটা গভীর নিস্তব্ধতা।
নতুন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার চেয়ে পুরনোকে ধরে রাখার ইচ্ছেই প্রবল হয়ে ওঠে।

  • যদিও আস্তে আস্তে আমাদের শারীরিক ক্ষমতা কমে আসে, শরীরের হাড়ে হাড়ে ব্যাথা টানে। কিন্তু অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার তো আর কমে না। সেই সঞ্চিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের করে তোলে "বুড়ো জ্ঞানী" ।
    যুবকদের অহংকারী উচ্ছ্বাসের মধ্যে বয়স্কদের সেই শান্ত নির্মল জলের মতো জ্ঞান হয়তো সেইভাবে চোখে পড়ে না। কিন্তু যারা বুঝবে, তারা তা অমূল্য মনে করবে।
  • বার্ধক্য নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা অনুপ্রাণিত হতে পারি।
    কারণ বার্ধক্য তো শুধু শারীরিক জীর্ণতার নয়, তা হল জীবনের একটি নতুন অধ্যায়। যে অধ্যায়ে আছে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন শিক্ষা, আর নতুন সম্ভাবনাও।
    অতীতকে পিছনে ফেলে এবারে নিজেদের জন্য বাঁচার পালা। নিজের স্বপ্নগুলি পূরণ করার, নিজের আগ্রহগুলি ধাওয়া করার, আর জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করার।

উঁহু, বার্ধক্য কোনো অভিশাপ নয়। বরং এটি জীবনের একটি নতুন সুযোগ। যে সুযোগে আমরা নিজেদের ভুল-ত্রুটি থেকে শিখতে পারি, অতীতের স্মৃতিগুলিকে রোমন্থন করতে পারি। আর বর্তমানকে মনে প্রাণে উপভোগ করতে পারি। সুতরাং, আসুন বার্ধক্যকে ভয় না করে সাদরে গ্রহণ করি।
কারণ জলপাই কালো হওয়াটা তো প্রকৃতির নিয়মেই স্বাভাবিক।