যখন বাদশাহ হন ছোট্ট পুত্র!
বাংলার ইতিহাসে এমন অনেক কিংবদন্তি রয়েছে, যেগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। আজ আমরা তেমনই একটি কিংবদন্তির গল্প শুনবো, যা বলে যে, কীভাবে একজন ছোট্ট পুত্র তার রাজ্যের বাদশাহ হয়ে উঠলো।
একবারের কথা। একদম গ্রাম্য এলাকায় এক রাজা ছিল। তার ছিল দুই সন্তান, এক পুত্র আর এক কন্যা। বড় সন্তান পুত্র, সে ছিল বেশ রূপবান, বুদ্ধিমান এবং সাহসী। কিন্তু ছোট্ট কন্যাটি ছিল অল্পবয়স্ক, কালো এবং অস্বাস্থ্যকর। তাই সবাই বড় ছেলেটিকেই বেশি পছন্দ করতো।
বড় ছেলেটির বিয়ে হলো এক রাজকন্যার সঙ্গে, আর ছোট্ট কন্যার বিয়ে হলো একজন দরিদ্র কৃষকের সাথে। কয়েক মাসের মধ্যেই বড় ছেলেটির এক সুন্দর পুত্র সন্তানের জন্ম হলো। সবার কাছেই খুব আনন্দের খবর। পুরো রাজ্যে সেই ছোট্ট রাজপুত্রকে নিয়েই হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো। সবাই তার সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তির প্রশংসা করতে লাগলো।
এদিকে, ছোট্ট কন্যারও এক সন্তানের জন্ম হলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেটি ছিল অল্পবয়স্ক, কালো এবং অস্বাস্থ্যকর। তাই কেউই সেই শিশুটির খোঁজ নিলো না। সবাই তাকে অবহেলা করতে লাগলো।
কিন্তু ছোট্ট কন্যাটি তার পুত্রকে খুব ভালোবাসতো। সে তার সবটুকু চেষ্টা করতো যাতে তার ছেলেটি ভালোভাবে বড় হয়। কিন্তু যতদিন যেতে লাগলো, ছোট্ট ছেলেটির অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো। সে আরো বেশি কালো এবং রোগা হয়ে গেলো।
ছোট্ট কন্যাটি কিছু করার জন্য খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। সে তার স্বামীকে বললো, "আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আমার ছেলেটি মারা যাচ্ছে।" তার স্বামী বললো, "চিন্তা করো না, আমি আমার বড় ভাইয়ের কাছে যাবো। সেই আমাদের সাহায্য করবে।"
বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার পর ছোট্ট কৃষকটি সবকিছু খুলে বললো। বড় ভাইয়ের মন গললো। সে বললো, "আমার বাবার রাজ্যের একটি অংশ আছ, সেটি তোমার শ্বশুরের জন্য।"
ক্ষুদ্র কৃষকটি তার পরিবারকে নিয়ে সেই অঞ্চলে চলে গেলো। তারা একটি ছোট্ট বাড়ি বানালো এবং সেখানেই বসবাস করতে লাগলো। কয়েক বছর পর, ছোট্ট ছেলেটি বেড়ে উঠলো। সে খুবই সাহসী এবং বুদ্ধিমান হলো। সে পড়াশুনা করলো, ঘোড়ায় চড়া শিখলো এবং অস্ত্র চালানোও শিখলো।
একদিন বড় রাজার মৃত্যু হলো। তার রাজ্যের সবাই বড় রাজপুত্রকেই বাদশাহ হিসেবে চাইলো। কিন্তু তিনি বললো যে, "আমার ছোট ভাইয়ের পুত্র আমার চেয়েও যোগ্য বাদশাহ হওয়ার জন্য।"
তাই সবাই ছোট্ট কৃষকের ছেলেটিকে বাদশাহ বানালো। সে খুব ভালোভাবে রাজ্য শাসন করলো। সে তার প্রজাদের ভালোবাসা এবং সম্মান অর্জন করলো।
আর সেই ছোট্ট, কালো এবং অস্বাস্থ্যকর শিশুটি বাদশাহ হয়ে গেলো। সেই প্রমাণ করে যে, সবার কাছে সম্মান অর্জন করতে পারে, যদি তার মনে আকাঙ্ক্ষা থাকে এবং সে সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকে।