যখন সূর্য জেগে উঠে গ্রীষ্মের দ্বার খুলে দেয়!




গ্রীষ্মের রৌদ্রের দাবদাহে প্রকৃতির যখন যেন অস্থিরতা, তখনই মন তোমার সন্ধানে ছটফট করতে থাকে- আশাধী একাদশী। এই তিথিতে শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতিনীতি না, লুকিয়ে আছে প্রকৃতির প্রক্রিয়ায় হওয়া খুবই সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন।

গভীর নীল রঙের আকাশ তখন যেন আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। সূর্যের আলোয় স্বর্ণালী আভা তখন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সূর্য যখন ক্রান্তিকে দক্ষিণ দিকে ঘুরতে শুরু করে, তখনই আমাদের পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়ে যায়। দিনগুলি তখন বড় আর রাতগুলি হয় ছোট। আশাধী একাদশী ঘটে এই বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে। এই দিনের সূর্যোদয় হয় মৃগশিরা নক্ষত্রে, যা আশাধী নক্ষত্র বলেও পরিচিত।

এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয় এবং ব্রত রাখা হয়। বলা হয়, এই দিনে ভগবান বিষ্ণু ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং তাঁর অর্ধ অংশ বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে চতুর্মাসব্যাপী যোগনিদ্রায় চলে যান। এই চার মাসকে বলা হয় চাতুর্মাস্য।

আশাধী একাদশীর দিন ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয় তুলসীর পাতার মালা দিয়ে, শঙ্খ ও চক্রের সঙ্গে। পূজার পর ভোগ দেওয়া হয় পান্তাভাত, ঘি, মধু, দই আর শাক-সব্জি। এরপর দেওয়া হয় নৈবেদ্য। এই দিনে ব্রত রাখা হয়, যা দীর্ঘায়ু এবং শুভ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।

এই দিনে প্রকৃতিও যেন একটা নতুন রূপে সেজে ওঠে। গাঢ় সবুজ ঘাসের ময়দানে গাঢ় নীল আকাশ, সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝলমল করা রান্ধুনী ফুল, বাতাসে ভেসে আসা মাটির ঘ্রাণ- সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন এক নতুন শুরু।

আশাধী একাদশী আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনের কথা। সূর্যের দক্ষিণায়ন ঘটা, দিনের দৈর্ঘ্য কমা এবং রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও জীবনে কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন। এই দিনটি হতে পারে সেই পরিবর্তন শুরু করার একটি সুযোগ।