যোগেশ মহাজন




আমাদের দেশের কয়েকটি রাজ্যই অন্য রাজ্যের তুলনায় মানুষের স্বভাবে কিছুটা আলাদা। যেমন, উত্তর ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ইত্যাদি রাজ্যের মানুষ বেশুমার সাদাসিধা, আন্তরিক স্বভাবের হয়ে থাকেন।
আবার, দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু বা অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষেরা কাজের ব্যাপারে অনেক বেশী মনোযোগী হয়ে থাকেন। তবে যারা সবচেয়ে কিছুটা আলাদা, তারা হলেন মহারাষ্ট্রের মানুষরা।
আমি খুব ছোট্ট বেলা থেকেই ক্রিকেটের একজন উচ্চাকাঙ্খী খেলোয়াড়। আর ক্রিকেটের জগতে, মহারাষ্ট্রের মানুষদের প্রতিভার পরিচয় মানা যায় না। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি র‌‍্যাংকের ক্রিকেটার তৈরী করেছে মহারাষ্ট্রই। সচীন তেণ্ডুলকর, সুনীল গাওস্কর, এম এস ধোনি, রবি শাস্ত্রী, অজিত আগরকর, শ্রীনাথের মতো অজস্র তারকা ক্রিকেটার মহারাষ্ট্রেরই তৈরি।
ক্রিকেট ছাড়াও, সিনেমার জগতেও মহারাষ্ট্রীয় মানুষের অবদান কম নয়। অমিতাভ বচ্চন, আশুতোষ গোয়ারিকর, দীপিকা পাড়ুকোনের মতো মানুষরাও মহারাষ্ট্রেরই। তবে, যেখানে মহারাষ্ট্রের মানুষরা কিছুটা এগিয়ে থাকেন, তা হল তাদের সাহস, দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসে।
আপনি কোনো মহারাষ্ট্রীয় মানুষের সাথে দেখা হলে বুঝবেন যে তাদের কথা বলার ধরন, হাঁটার ধরন, কাজ করার ধরন সবকিছুতেই যেন একটা আলাদা স্বাধীনতা আর আত্মবিশ্বাসের ছাপ রয়েছে। একবার আমার ঘনিষ্ট বন্ধু শিবাজী আমাকে বলেছিল যে, মহারাষ্ট্রের মানুষেরা কোনো কাজ শুরু করার আগেই মনের মধ্যে বলে নেয়, "আমরা করতে পারবো।"
আর এটাই হল মহারাষ্ট্রীয় মানুষদের আলাদা করে দেওয়া অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এমনকি সবচেয়ে কঠিন সমস্যার মধ্যেও তারা তাদের আত্মবিশ্বাস অনুযায়ীই এগিয়ে যায়। মনে হয়, তাদের মধ্যেকার আত্মবিশ্বাস আর সাহসই তাদের এত এগিয়ে রাখে।
তবে, সবচেয়ে ভালো দিকটা হচ্ছে যে, এই আত্মবিশ্বাস তারা কখনোই অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয় না। বরং, দরকার হলে অন্যদেরও এই আত্মবিশ্বাসের পাঠ শেখায়। আর এটাই তো হল সবচেয়ে বড়ো গুণ। নিজেদের এগিয়ে রাখার পাশাপাশি, অন্যদেরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
মহারাষ্ট্রের মানুষদের কাছ থেকে আমরা অনেকেই অনেক কিছু শিখতে পারি। বিশেষ করে, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তার কাছ থেকে। মহারাষ্ট্রীয়দের এই বিশেষ গুণের কারণেই তাদের সম্পর্কে বলতে হয়, "হ্যাঁ, মহারাষ্ট্র, তুমি কেবল একটা রাজ্য নও, একটা আলাদা ভাবাধারাও।"