যাদের বেঁচে থাকা লড়াইয়ের, তাদেরই নাম 'পার্সি'




ইতিহাস বহন করে প্রত্যেক জাতি। শুধু আদিবাসী নয়, অন্য সকলেরই আছে ইতিহাস, আছে রক্ত, ঘাম আর অশ্রু। তবে সেইসব ইতিহাস আমরা বলিনা কেন? বলা হয় না প্রধানত তাই, তা অচেনা, তা হয়তো আমাদের সাথে মিলে না, তা হয়তো আমাদের সুবিধে মত নয়। তেমনই একটা জাতি হল 'পার্সি'। ঠিক কত সালে ভারতবর্ষে এই জাতির আগমন তা এখনো সঠিক করে জানা যায় না। আবার তাদের জন্মভূমি কোথায়, তাও নিয়ে চরম দ্বিমত।

কেউ বলে ইরান, কেউ বলে পার্স। অবশ্য, পার্সি শব্দটি পারস শব্দ থেকেই এসেছে বলে মনে করা হয়। ইতিহাসের পাতায় তাদের আবির্ভাব ঘটে গিয়েছে ৭ম শতাব্দীতে। এশিয়ার মহাদেশে সে সময় ইসলামের বিস্তার ঘটছিল। ইসলামের প্রসারের জন্য তৎকালীন ইসলাম ধর্মীয় খলিফাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতেই প্রচুর সংখ্যক জরথুশ্রবাদীরা তাদের নিজের প্রাণ বাঁচাতে ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলের গুজরাট রাজ্যে এসে আশ্রয় নেয়। তখন থেকেই এই জাতি ভারতের সাথে জড়িয়ে যায়, হয়ে ওঠে ভারতেরই অংশ।

  • এইদেশে এসে তারা ভারতের সাথে নিজেদের মিশ্রন করে নেয়।
  • তবে তারা নিজেদের ভাষা, রীতিনীতি, ধর্ম বা সংস্কৃতি ত্যাগ করে না।
  • ভারতের গুজরাটের সুরাত, মুম্বাই, দাদরা নগর হাভেলি ও ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপে এসে তারা নিজেদের গড়ে তোলে।

তাদের ধর্ম তথা জরথুশ্ত্রবাদ অনুযায়ী, তারা সূর্যের উপাসনা করে। জরথুশ্ত্রবাদে অগ্নিইশ্রবাদ প্রধান শাখা। এরপরও তারা সূর্যের উপাসনা করে। আগ্নিইশ্রবাদে জলকে দেবতা মনে করা হলেও জরথুশ্ত্রবাদে জলকে পবিত্র মনে করা হয়। নারীদের প্রতি তাদের সম্মান অসীম। নারীরা পর্দা করে না। তারা চুল থেকে মাথা থেকে পায়ের পাতা অব্দি ঢেকে রাখে। বিবাহের সময় নববধূকে স্বামীর বাম হাতের আঙুলের বান্ধুরীয় হাতে যবের তৈরী আংটি পরিয়ে দেওয়া হয়। এই আংটি অসুবিধার সময় ছাড়া নারীরা খুলতে পারে না। অসুবিধা মানে হল বিধবা কিম্বা তালাকপ্রাপ্ত হওয়া।

পার্সিরা আর্য জাতির। তাদের মুখচোখে সেই আভাস ফুটে ওঠে। তাদের রক্তে আত্মবিশ্বাস, পौरুষত্ব ও দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রবল। ভারতবর্ষে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষেত্রে তাদের জুড়ি মেলা ভার। রতন টাটার মত ব্যক্তিত্ব হল এর জ্বলন্ত উদাহরণ। এদের মধ্যে অনেক ব্যক্তি এদেশে এসে সংসদে উপস্থিত হয়েও দেশের জন্য কাজ করেছেন। একটা সময় এদের সংখ্যা ছিল 90 হাজার। কিন্তু ইদানীং তা 50 হাজারেরও কম। তাদের জন্মহার অনেক কম। এদের পরিবার সাধারণত চার সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই জাতি।

আজকালকার এই ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এতটাই উন্নত যে, এখন পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রান্তের মানুষের খবর পাওয়া যায় এক নিমেষে। বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন সংস্কৃতি নিয়ে একটি ক্লিকেই মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসছে। কিন্তু সেই সাথে নিজের সংস্কৃতি নিয়েও সচেতন হওয়া উচিত। আজ শনিবার তো নয়ই কোনোদিনই সংস্কৃতির পরিচয়ের খবরদারী চলুক।