যৌবনে গোয়া...যা স্মৃতির ঝাঁপিতে বন্দী করে রাখতে চায় প্রত্যেকেই...




সমস্ত গোঁজামিল, দায়িত্ব, চাপ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তির জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে উঠি মাঝে মধ্যে। মনের গভীরে কোথাও একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয় কিছুদিনের অবসর যাপনের জন্য। একটু অন্যরকম, দুশ্চিন্তামুক্ত পরিবেশে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আমাদের মন কামনা করে। আর এমন সময়ই সাধারণত গোয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা আমাদের মাথায় ঘুরতে শুরু করে। সমুদ্র সৈকত, সারাক্ষণের আনন্দ, বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার আর বন্ধু মহলের সঙ্গ – গোয়া যেন এদেরই এক অপরূপ সমাহার।

গোয়ার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়টা হয়েছিল যৌবনের দ্বারপ্রান্তে। সেই সময় আমি একজন উচ্ছ্বসিত, কিছুটা নির্ভাবন, আর অযথা উত্তেজনায় ভরা তরুণ। আমার কাছে গোয়া ছিল শুধুই মাত্র বালির সৈকত, সারাদিনের পার্টি আর সন্ধ্যায় সৈকতের কুঁড়েঘরে রাতজাগা কাটানোর জায়গা। তখন আমার জানা ছিল না গোয়ার আরও একটি দিক রয়েছে, যা গভীর এবং বহুমাত্রিক।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, আমি যতটা পরিণত হয়েছি ততটাই গোয়ার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে। এখন আমি বুঝতে পেরেছি, বালির সৈকতের পাশাপাশি গোয়ায় রয়েছে আরও অনেক কিছু যা আমাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে পারে। গোয়ার সবচেয়ে বড় শহর পানাজি, যা ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলী, রঙিন বাড়ি আর সংকীর্ণ রাস্তাগুলি দ্বারা সজ্জিত। পুরোনো গোয়া, যা UNESCO এর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষিত, এটি ঐতিহাসিক গির্জা, গির্জাঘর এবং মহান আলফনসো দে আলবুকার্কের সমাধিকক্ষ সহ পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক আমলের অবশিষ্ট স্মৃতিস্তম্ভ ভরা একটি যাদুঘর।

তবে গোয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল তার সৈকতগুলি। উত্তর গোয়ার বাগা, কালানগুটে এবং আনজুনার মতো সৈকতগুলি তাদের সরস আবহাওয়া এবং জলকেলি আর পানির খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগের জন্য বিখ্যাত। অন্যদিকে, দক্ষিণ গোয়ার পালোলেম, বেনৌলিম এবং কাভেলসিমের মতো সৈকতগুলি তাদের শান্ত পরিবেশ এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য জনপ্রিয়। এখানে আপনি সূর্যাস্ত দেখার সময় সৈকতের বালিতে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন, কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ফ্রিজবি বা বালির বলিবল খেলতে পারেন।

খাওয়ার জন্য গোয়ার রয়েছে বিভিন্ন রকমের পদ। স্থানীয় গোয়ান খাবার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক এবং সমুদ্রের খাবার, গোয়ায় সব কিছুরই ব্যবস্থা আছে। আপনি মাছের কারি, ভিন্ডালু, সোরপটেলের মতো স্থানীয় বিশেষ খাবার উপভোগ করতে পারেন, কিংবা পিজ্জা, পাস্তা এবং সামুদ্রিক খাবারের মতো অন্যান্য খাবার খেতে পারেন। এখানকার বীচ শ্যাক এবং রেস্তোরাঁগুলিও দেশি এবং বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়।

গোয়ায় রাত্রিজীবনও বেশ জমজমাট। পানাজির ন্যাকটিম বাজার এবং ক্যাজলরকস নাইটক্লাবের মতো জায়গাগুলি তাদের সঙ্গীত, আলো এবং উচ্ছ্বসিত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। আর যদি আপনি সত্যিকারের গোয়ান অভিজ্ঞতা চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্থানীয় ফেরিগুলিতে উঠতে হবে এবং মন্ডোভী নদীর তীরে থাকা সৈকতের শ্যাকগুলি দেখতে হবে।

যৌবনের দিনগুলিতে, গোয়ায় আমার অভিজ্ঞতা কেবলই ছিল বালির সৈকত, পার্টি এবং সারারাত জাগা কাটানোরই। কিন্তু যখন আমি পরিণত হয়েছি, আমি বুঝতে পেরেছি যে গোয়া সত্যিই এতো এতো কিছু দিতে পারে, যা আমাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে পারে। এটি সমুদ্রের সৈকত, ঐতিহাসিক স্থান, সুস্বাদু খাবার এবং উচ্ছ্বসিত রাত্রিজীবনের একটি অপূর্ব মিশ্রণ। যারা কখনও গোয়া যাননি তাদের বলব, অবশ্যই একবার গিয়ে দেখুন। আর যারা আগে গিয়েছেন এবং আবার যেতে চান, তাদের বলব, আবার যান, আরও অনেক কিছু আছে যেগুলি আপনাদের অপেক্ষা করছে।