যেমেন: এক স্বাদে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমাবেশ!




বন্ধুরা, যাঁরা আরবের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রেমী, যাঁরা বিভিন্ন জাতির নান্দনিক স্থাপত্য ও প্রাচীন রীতিনীতির প্রতি অনুরাগী, তাঁদের জন্যই এই আজকের আলোচনা। আজ আমরা যাত্রা করব সেই ঐতিহাসিক ভূমিতে, যা একসময় ছিল মশলার পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টপওভার, আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সেই দেশের নাম যেমেন।
যেমেন একটি দেশ, যেখানে প্রকৃতির বিচিত্র রূপের সাক্ষী হবে আপনি। সবুজ পাহাড়ের সারি থেকে মরুভূমির বিশাল প্রান্তর, আরব সাগরের স্বচ্ছ জল থেকে মাসিরাহ দ্বীপপুঞ্জের অপরূপ সৌন্দর্য— সব মিলিয়ে যেমেন আপনাকে উপহার দেবে প্রকৃতির এক অপূর্ব সিম্ফনি।
ইতিহাসের পাতায় ফিরে তাকালে দেখা যায়, যেমেনের ভূখণ্ডটি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের বসবাসের জন্য জনপ্রিয় ছিল। প্রাচীন সেবাই রাজ্যের সভ্যতা থেকে শুরু করে হিম্যারাইট কিংডমের উত্থান এবং পতন— যেমেনের ইতিহাস বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও রাজত্বের কাহিনি বলে।
ইসলামের আবির্ভাবের পর, যেমেন সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামি শাসনের অধীনে আসে। উমাইয়াদের, আব্বাসীয়দের এবং তাদের পরবর্তীদের শাসনকালে যেমেনের শিল্প, স্থাপত্য এবং সাহিত্যের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। যেমেনিদের বিখ্যাত মসজিদ প্রদেশ, শানআ এবং তার পুরানো শহরের স্থাপত্য শিল্প এই সময়ের সাক্ষ্য বহন করে।
তবে, যেমেনের আধুনিক ইতিহাস একটি জটিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গল্প। দীর্ঘদিন ব্রিটিশদের উপনিবেশের অধীনে থাকার পর, ১৯৬৭ সালে উত্তর ও দক্ষিণ যেমেন দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায়। ১৯৯০ সালে, এরপর তারা পুনরায় একীভূত হয়। কিন্তু, দুটি অঞ্চলের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পার্থক্যের কারণে দেশটি বারবার সংঘাতের মুখে পড়েছে।
আজ, যেমেন একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। তবে, ২০১৫ সাল থেকে চলা দেশীয় যুদ্ধ এই দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যুদ্ধের কারণে, যেমেন গুরুতর মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
যেহেতু আমরা যেমেনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছি, তার সুস্বাদু খাবারের কথা না বললেই নয়। যেমেনি খাবার তার মশলাদার স্বাদের জন্য বিখ্যাত। সালতাх, ফাহসাх এবং আসিদহ— এই দেশের কিছু জনপ্রিয় খাবার। তাদের সুস্বাদু বিরিয়ানি এবং আদানি গরুর মাংসের কথাও না বললেই নয়।
যেমেন তার স্বাগতিকতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষদের জন্যও পরিচিত। সান'আর পুরানো শহরের ঘুরে বেড়ানো হোক বা সুকের ব্যস্ত রাস্তায় জিনিসপত্র কেনাকাটা, যেমেনিদের আতিথেয়তা সর্বত্রই আপনাকে মুগ্ধ করবে।
আরেকটি জিনিস যা আপনাকে অবাক করবে সেটি হল যেমেনের রাজধানী সান'আ। এই শহরটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত, যা এর বিস্ময়কর মসজিদ, প্রাচীন স্থাপত্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলির জন্য বিখ্যাত।
বন্ধুরা, যেমেন এমনই একটি দেশ, যেখানে প্রতিটি পাথরেই ইতিহাসের সাক্ষী বিদ্যমান। এটি একটি দেশ, যেখানে প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিকতা একসঙ্গে মিশে গেছে। আপনি যদি সত্যিকারের আরব অভিজ্ঞতা খুঁজছেন, তাহলে যেমেন আপনার জন্য নিখুঁত গন্তব্য।
তবে, আমি আপনাকে সুপারিশ করব যে, যেমেন ভ্রমণের আগে আপনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরীক্ষা করে নিন। এবং, সেই অনুযায়ী আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।
যেমন যাওয়ার আগে কিছু শব্দ শিখে নেওয়াও ভালো হবে। যেমন "সালাম আলেইকম" (শান্তি তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক), যা সাধারণ অভিবাদন। "শুকরান" (ধন্যবাদ) এবং "মা'আস-সালামাহ" (বিদায়)ও ভালো শব্দ।
তাই, বন্ধুরা, আপনি যদি একটি অবিস্মরণীয় এবং জীবনকে পরিবর্তন করে দেয় এমন অভিজ্ঞতার খোঁজে থাকেন, তাহলে যেমেন আপনার জন্য নিখুঁত গন্তব্য। সমৃদ্ধ ইতিহাস, সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং স্বাগতিক মানুষের দেশ যেমেন আপনার অপেক্ষাকে অবশ্যই পূর্ণ করবে।