যমুনা কাশ্মীরের ষড়যন্ত্র




যমুনা কাশ্মীরের ওপর এতদিন ধরে যত অযাচিত বিদেশি হস্তক্ষেপ হয়েছে, তা হয়তো অন্য কোনও রাজ্যের ভাগ্যে জোটেনি। ১৯৪৭-র ভারত বিভাগের পর থেকেই এই এলাকা নিয়ে রাজনৈতিক হাড়হাড়ি টানাটানি চলছে।

যত আগ্রাসন, তত পাল্টা আগ্রাসন

স্বাধীনতার পরে অবশ্য পাকিস্তান প্রথমেই হানা দেয় কাশ্মীরে। পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে ছিল কয়েক হাজার কবীলাবাসী। তাদেরই সঙ্গে যোগ দেয় হুরিয়াত নামের কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু জাতিসংঘের শরণাপন্ন হন এই বিষয়টি নিয়ে। তাঁরই অনুরোধে জাতিসংঘ একটি প্রস্তাব পাস করে, যাতে বলা হয়, "যমুনা কাশ্মীরের জনগণ অবাধ আর নিরপেক্ষ ভাবে তাঁদের ভবিষ্যৎ স্থির করবে।"

যদিও তখন থেকেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী উত্তরের অংশটুকু দখল করে নেয়। সেটাই এখন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নামে পরিচিত। ভারতের দখল থাকে দক্ষিণের বড় অংশ জুড়ে। ১৯৬৫ সালে আবার পাকিস্তান হামলা করে। ১৯৭১ সালে হয় তৃতীয় ভারত-পাক যুদ্ধ। তবে সেই বার দু'দেশের মধ্যে তাসখন্দ চুক্তি হয়।

ক্রমাগত উত্তেজনা

তার পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় শুরু হয় একটি সশস্ত্র আন্দোলন। আতঙ্কবাদী গোষ্ঠী এবং কিছু রাজনৈতিক দল দাবি তোলে, কাশ্মীর হবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বাড়তে থাকে হিংসা। আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত কাশ্মীরে সন্ত্রাসে, সংঘর্ষে মারা গেছেন অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ।

তার পরেও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে কথা বার্তায় বসেছে ভারত সরকার। ২০০২ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বাজপেয়ী-মুশারফ শীর্ষ বৈঠকও হয়। তবে অশোকচক্র হামলা, সংসদ হামলা সহ বেশ কয়েকটি ঘটনার পরে আবার উত্তেজনা বাড়ে।

চিদাম্বরমের পরামর্শ

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা থাকতে পারে না কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের। কাশ্মীরি জনগণ যা চাইবে স্বাধীন হওয়ার জন্য, তা-ই করবে। তবে একটি শর্ত আছে। কাশ্মীরে ভোট দিতে হবে সবাইকে। প্রতিবেশি রাজ্যের কোনও বাসিন্দা যেন কাশ্মীরে ভোট না দিতে পারে, সে ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা।

সমস্যা এবং সমাধান

যমুনা কাশ্মীরের সমস্যা জটিল তো বটেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সমাধান হবে না। যদিও সামরিক বাহিনীর ব্যবহারে পরিস্থিতি আরও আগুনে ঘি ঢালছে বলে মনে করছেন অনেকে। সশস্ত্র বাহিনীকে নয়, রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

একটি বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরের চেয়ে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবে পাকিস্তান। তাদের সরকার সব সময়ে এই আশায় বসে থাকে যে, যমুনা কাশ্মীর someday তাদের অংশ হয়ে যাবে। তাই পাকিস্তানের সমর্থন থাকবেই কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের।

যমুনা কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বার্তায় বসতে হবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। তবে তার আগে কেন্দ্রের কাছে তাদের স্পষ্ট প্রস্তাব থাকা উচিত কী চায় তারা।

যমুনা কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানে কেবল কাশ্মীরিদেরই ভূমিকা নয়, গোটা দেশের মানুষেরও ভূমিকা আছে। সকলকে মিলে একটা মত তৈরি করতে হবে। ভারতের অটুট অংশ হিসেবে থাকবে যমুনা কাশ্মীর, নাকি স্বাধীন হয়ে যাবে—সেটা জনগণ ঠিক করবে।