যারা আফ্রিকার কাছে মহীনায় ৩০ হাজার টাকা কামানোর সুযোগ পেয়েছেন!




আফ্রিকার দেশ কিংবা অঞ্চলের নাম শুনলে আমাদের অনেকেরই যে চেনা ছবি মনের মধ্যে ভেসে ওঠে, সেটা মোটেই সুখের নয়। আমরা ভাবি ভয়াবহ দারিদ্র্যতা, রোগ-বালাই, অনাহার আর অশিক্ষা। আমাদের এই মনের ছবির অনেকটা দায়, হলিউডের রোমাঞ্চকর ছবিগুলোর ওপর। সেই ছবিগুলো আমাদের বারবার দেখাচ্ছে কীভাবে কিংবা কী ধরণের বিপদসঙ্কুল অবস্থায় আফ্রিকার লোকেরা বাস করে। কিন্তু সবসময় তো আর হলিউডের ছবিই ঠিক হয় না। আফ্রিকার আবার অন্য একটা ছবিও তো রয়েছে। আর সেই ছবিটার সঙ্গেই আফ্রিকার উন্নয়নের গল্পটাও জড়িয়ে আছে। আর এই গল্পটাই আপনাদের শোনাব আজ।
যেদিন তোমার সামনে সময়ের দেওয়াল ভেঙে পড়ে
ওল্ডহাম ম্যানচেস্টারের প্রান্তে একটি শহর। এখানেই বাস আমাদের আজকের গল্পের নায়িকা মিসেস মেরি আইডাহোর। তিনি একজন নাইজেরীয় মেয়ে, যিনি তার প্রথম জীবনে খুবই কষ্টে-সঙ্কটে সময় কাটিয়েছেন। তিনি দুই বছর বয়সে তার বাবাকে হারান। আর তারপরে তার মা-কে বিয়ে করানো হয় অন্য একজন লোকের সঙ্গে। তার মা ছেলেমেয়েদের নিয়ে নতুন সংসার তৈরি করেন। কিন্তু মেরির সৎ বাবা সৎ ছেলে-মেয়েদের চেয়ে মেরিকে কমই ভালবাসতেন। তিনি মেরির উপর নির্যাতন চালাতেন।
মেরির এমন অবস্থা ছিল যে, তিনি খাবারের জন্য অনেক সময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। একদিন একটি ডাস্টবিনের কাছে কুড়াতে গিয়ে তিনি প্রায় মরেই যেতেন। কারণ, সেই ডাস্টবিনে তার সামনেই একটি ইঁদুর মারা গেল। সেইদিনের ঘটনা মেরির জীবনকে বদলে দেয়। সেইদিন তিনি বুঝতে পারেন যে, তিনি আর এইভাবে চলতে পারবেন না। তিনি নতুন জীবন শুরু করবেন। তিনি ঠিক করলেন যে, তিনি যেভাবেই হোক পড়াশোনা করবেন।
মেরি সত্যিই পড়াশোনা শুরু করলেন। তিনি রাতদিন পড়তেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন যে, শুধু ইচ্ছে থাকলেই হবে না। তাকে অর্থেরও জোগাড় করতে হবে। তাই তিনি একটি কাজও শুরু করলেন। তিনি একটি হোটেলে কাজ করতেন। পড়া দিয়ে আর কাজ দিয়ে মেরি দিনরাত কাটাতেন। তার এত কষ্টের ফলও তিনি পেয়েছিলেন। তিনি প্রথম শ্রেণীতে পাস করলেন। তারপরে তিনি দুটো মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করেন।
যখন বাধা এমন যে রাস্তাই দেখা যায় না
মেরি যখন ইংল্যান্ডের একটি বড় কোম্পানিতে কাজ করছিলেন, তখনই তার সঙ্গে দেখা হয় জিম্বাবুয়ের একজন ডাক্তারের সঙ্গে। জিম্বাবুয়ের সেই ডাক্তার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মেরিও তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। বিয়ের পরে মেরি জিম্বাবুয়ের তার স্বামীর বাড়িতে চলে যান। কিন্তু সেখানেও মেরির জীবন সুখের ছিল না। তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে অত্যাচার করত। তার স্বামীও তাকে খুব একটা ভালবাসতেন না। মেরি দুঃখে-কষ্টে দিন কাটাতে লাগলেন। কিন্তু মেরি তো কখনও হাল ছাড়েননি। তিনি দুর্দিনের আঁধার কাটিয়ে ভবিষ্যৎ আলোকিত করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
মেরির ভাগ্যও একদিন ফিরে। একদিন মেরি তার বাড়িতে টিভি দেখছিলেন। তিনি দেখলেন একটি সংবাদ চলছে। সেখানে বলা হচ্ছিল যে, জিম্বাবুয়ে সরকার এগ্রিকালচারে কাজ করার জন্য বিদেশীদের দরকার। মেরি এই খবর শুনে খুব খুশি হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, এটাই তো তার জীবনকে বদলে দেওয়ার সুযোগ। তিনি এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তাই তিনি জিম্বাবুয়ের এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টে আবেদন করেন। কয়েক সপ্তাহ পরেই তিনি চাকরি পেয়ে যান।
এমন সফলতা যা সবারই স্বপ্ন
মেরির চাকরি পাওয়ার পর থেকে তার জীবনে সবকিছুই বদলে গেল। তিনি তার চাকরিতে এতটাই ভাল করলেন যে, তার সিনিয়র অফিসাররা খুব খুশি হলেন। তারা মেরিকে এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিলেন। এখন মেরি জিম্বাবুয়ের এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে বড় কর্তা। তিনি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। মেরির কাছে এখন একটি বিলাসবহুল বাড়ি আছে। তিনি একটি গাড়িও কিনেছেন। তিনি তার পরিবারের সব প্রয়োজনও পূরণ করছেন। মেরির জীবনের এই অসাধারণ গল্প আমাদের সবাইকে একটা শিক্ষা দেয়। তা হলো, আমাদের জীবনে যত বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেন, আমরা কখনও হাল ছাড়লে চলবে না। আমাদের স্বপ্নের পিছনে আমাদের অবিচল থাকতে হবে। যদি আমরা অবিচল থাকি, তাহলে একদিন অবশ্যই আমাদের সফলতা আসবে।