যেসব কারণে আপনি এখনই মালাউই ভ্রমণে যেতে হবে
মালাউই ছিল আমার বালিশ বইয়ের মধ্যে উপেক্ষিত একটা নাম। আমি ম্যাপে উপস্থিত দেশগুলোতে এক এক করে টিক মারতাম আর এটা বাদ পড়ে থাকতো। মালাউই নামটা আমার কাছে অচেনা ছিল, যতক্ষণ না ভ্রমণ-সঙ্গী হিসেবে আমার স্বামী আমাকে আফ্রিকার এই “আফ্রিকার উষ্ণ হৃদয়” দেশটি দেখাতে চাইলেন।
প্রথমে ভ্রমণপিপাসুর আমার মধ্যে একটা দ্বিধা ছিল। আমি জানতাম না আমাদের দু'জনের জন্যই এটা কতটা নিরাপদ। আমার স্বামী হলেন একজন বর্ণবাদী পুরুষ আর আমি একজন এশীয় মহিলা। তাছাড়া, আমরা বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারী শুরু হওয়ার একটু আগে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কিছু গবেষণা এবং স্থানীয়দের থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা ভ্রমণ করব। এবং আহা! এটা ছিল আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি।
মালাউই হল আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এর পশ্চিমে জাম্বিয়া, উত্তরে তানজানিয়া, পূর্বে মোজাম্বিক এবং দক্ষিণ-পূর্বে মালাউই হ্রদ অবস্থিত। মালাউই হল মিঠা পানির মালাউই হ্রদের জন্মভূমি, যা দেশের পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে।
আমরা স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ থেকে লন্ডন হয়ে মালাউইয়ের রাজধানী লিলংগুয়ে গিয়েছিলাম। লিলংগুয়ে আমরা 3-তারকা হোটে থাকছিলাম। হোটেলটি নগরীর কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত। আমরা আমাদের হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়েছি এবং তারপর বিকেলে লিলংগুয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। আমরা কিছু স্থানীয় বাজার ঘুরেছি, কিছু স্মৃতি সামগ্রী কিনেছি এবং স্থানীয় রাস্তার খাবার খেয়েছি।
আমাদের মালাউই ভ্রমণের পরের স্টপ ছিল মালাউই হ্রদের কাছে অবস্থিত চেওনডা। আমরা লিলংগু থেকে চেওনডায় বাসে গেছি। বাস যাত্রা ছিল খুব সুন্দর। আমরা সবুজ পাহাড়, গ্রাম, এবং হ্রদ দেখেছি। আমরা চেওনডায় চেক-ইন করেছিলাম এবং তারপর সন্ধ্যায় মালাউই হ্রদে একটা সানসেট ক্রুজে গিয়েছিলাম।
তিনদিনের চেওনডা ভ্রমণের পর আমরা লিখোমা দ্বীপে গিয়েছিলাম। লিখোমা দ্বীপ হল মালাউই হ্রদের একটি দ্বীপ। আমরা একটি দ্রুতগতির নৌকায় করে লিখোমা দ্বীপে গিয়েছিলাম। লিখোমা দ্বীপে আমাদের হোটেল ছিল হ্রদের পাশে। আমরা আমাদের হোটেলের বারান্দায় বসে হ্রদ দেখেছি, সূর্যাস্ত দেখেছি এবং সূর্যোদয় দেখেছি।
চারদিনের লিখোমা দ্বীপ ভ্রমণের পর আমরা আবার লিলংগু ফিরে এসেছি। লিলংগু থেকে আমরা ফ্লাইট করে লন্ডন হয়ে এডিনবার্গ ফিরে এসেছি।
মালাউই আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্থানগুলির মধ্যে একটি। মালাউই হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমি স্থানীয় মানুষদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক আচরণের প্রশংসা করি। আমি তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য উপভোগ করেছি। আমি মালাউই হ্রদে সাঁতার কেটেছি, দৌড়েছি এবং সাইকেল চালিয়েছি। আমি মালাউই হ্রদের জলপ্রপাত দেখেছি এবং সেখানে হাইকিং করেছি।
আমার মালাউই ভ্রমণ ছিল সত্যিই অবিস্মরণীয়। আমি অবশ্যই ভবিষ্যতে আবার এই সুন্দর দেশটি ভ্রমণ করব।
আমি আপনাকে কিছু টিপস দিতে চাই যদি আপনি মালাউই ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন:
* নিরাপদ থাকুন এবং আপনার পাসপোর্ট এবং টাকা সুরক্ষিত রাখুন।
* মালাউই ভ্রমণের সেরা সময় হল শুষ্ক মরসুম, যা মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে।
* মালাউই হ্রদে সাঁতার কাটার সময় সতর্ক থাকুন।
* মালাউই একটি দরিদ্র দেশ। তাই, আপনি যদি মালাউই ভ্রমণ করছেন তবে দয়া করে দান করুন বা স্থানীয় ব্যবসাকে সমর্থন করুন।