যা ঘটেছিল রতন টাটার সাথে
2024 সালের 22 আগস্ট শুক্রবার
বয়সের কারণেই কি তাহলে শেষ পর্যন্ত চলে গেল একটি যুগ? একটি ঐতিহ্য? না, ঠিক তা বলতে পারবনা। কারণ সে যুগ এখনও আছে, তাঁর বোনানো প্রতিষ্ঠানটি এখনও আছে, তাঁর সৃষ্টি করা দর্শনটিও আজও অম্লান। সেই সব কিছুই আছে তাঁর অনুপস্থিতিতেও।
রতন ভাই আমার সবথেকে কাছের বন্ধুর মামা। তাই তাঁকে চিনি অনেকটা কাছ থেকেই। খুব ছোট থাকতেই একবার তাঁর সাথে দেখা হয়েছিল। সেই সময়কার অস্পষ্ট স্মৃতিটা আজও তাজা আমার কাছে। সেই সময়টিতে তাঁর মতো মানুষদের কাছে যাওয়া আমার জন্য খুবই সম্মানের বিষয় ছিল। আমার মতো ছেলের সাথে তাঁর কথা বলার সময়ও দিয়েছিলেন তিনি। মনে আছে, তিনি আমায় প্রশ্ন করেছিলেন, পড়াশোনা কেমন হচ্ছে? আর কী হতে চাই? বয়স তো খুব কমই ছিল তখন, উত্তর দিতেও ভয় পাচ্ছিলাম। তবু বলতে হলো, “আমি ডাক্তার হবো।” তিনি হাসলেন এবং বললেন, “খুব ভালো। আমরা জানি তুমি ডাক্তার হবে। খুব ভালো ডাক্তার হওয়ার জন্য পড়াশোনা করো। তাহলেই তুমি সাফল্যবান হবে।”
একজন কিশোরের জন্য এটি ছিল খুবই প্রেরণাদায়ক। মনে আছে, সেখান থেকে বেরোনোর পর থেকেই আমার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছাটা আরও বেশি জেদী হয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন নিজের পাঠ্যপুস্তকগুলো আরও বেশি ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। জানতাম, এর পেছনে রয়েছে রতন টাটার প্রেরণা।
আজ তিনি নেই; তবে তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তাঁর স্বপ্ন আছে, তাঁর সৃষ্টি করা মানুষগুলো আছে। “তাঁকে হারানো মোটেই হারানো নয়,” বলেছিলেন কবি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রতন টাটাও হারাননি। তাঁকে নিয়ে যারা গ গড়ে উঠেছেন, তারা সবসময়ই তাঁকে বয়ে নিয়ে চলবেন তাঁদের হৃদয়ে, মনে আর চিন্তায়।
আজও জ্বলছে সেই প্রদীপ বিলুপ্ত হয়নি যা আলো করলো দেশের প্রতি ঘরে।
আজও নিচ্ছে দেশের দায়িত্ব সেই মশাল, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অন্ধকার রাতেও হাজার হাজার আলোর রেখা টানে।
আর সবচেয়ে বড়ো কথা, তিনি হারিয়ে গেলেও তাঁর দর্শন রইলো। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, কেমন হয় নেতৃত্ব। একজন নেতা কেমন হন, তা আমরা রতন টাটার কাছ থেকে শিখেছি। উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি আজও এক আদর্শ বোধ। শুধুমাত্র তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোকেই নয়, সমগ্র দেশকে তিনি তাঁর কর্ম দ্বারা অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, ভারতের হৃদয়ে।