রেখাচিত্র




যখনই কেউ রহস্য এবং রোমাঞ্চে মোড়ানো গল্প শুনতে চায়, বাঙালিদের মনে প্রথমেই উঠে আসে সত্যজিৎ রায়ের অমর অসম্ভব গোয়েন্দা ফেলুদা। আসলে রায় কীভাবে এমন একটি চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন যা প্রায় আধ শতাব্দী পরেও মানুষের কাছে রহস্যের আকর্ষণ জিইয়ে রেখেছে, তা ভেবে অনেক সময়ই আমাদের অবাক লাগে।

রেখাচিত্রের প্রেক্ষাপটেই ফেলুদার জন্ম। সন্দীপন উপন্যাসে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এই চরিত্রটি। এটা ছিল ১৯৬৫ সাল। সত্যজিৎ রায়ের কলমে জন্ম নেয়ার পর থেকে, ফেলুদা যেভাবে বাঙালিদের মনে জায়গা করে নিয়েছে, তা অতুলনীয়। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ফেলুদা এখনও বাঙালিদের প্রিয়।

রহস্যের জগৎকে ফেলুদা কিভাবে এইভাবে জয় করেছে, কীভাবে সেই রহস্যে জড়িয়েছে সকল চরিত্র? তা বুঝতে হলে আমাদের সত্যজিৎ রায়ের লেখায় ডুব দিতে হবে।

ফেলুদা আসলে একজন স্বাভাবিক মানুষ। সে সব সময় রহস্যের পেছনে ছোটে না। কিন্তু রহস্য যখন তার কাছে এসে উপস্থিত হয়, সে তখন বসে থাকতে পারে না। তাকে রহস্যের গভীরে ডুবতেই হয়। আর সেই রহস্যের গহ্বর থেকেই সে বের করে আনে চমকপ্রদ সত্য।

ফেলুদার চরিত্রের মধ্যে আমরা দেখতে পাই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং অসাধারণ রহস্যোদ্ঘাটন ক্ষমতা। তবে, এগুলো ছাড়াও আরও কিছু গুণ রয়েছে যা ফেলুদাকে অনন্য করে তুলেছে। সে হলো তার সাহস, বুদ্ধির প্রখরতা এবং সবচেয়ে বড় কথা তার মানবিকতা।

ফেলুদা কখনোই ভয় পায় না। সে সবসময় রহস্যের মোকাবিলা করেছে সাহসের সঙ্গে। তার বুদ্ধির প্রখরতাও কম নয়। সে সবসময় সত্য পেতে চেষ্টা করে এবং সেই সত্যকেই সে সকলের সামনে তুলে ধরে। তবে, ফেলুদার সবচেয়ে বড় গুণ হলো তার মানবিকতা। সে কখনোই নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করে না। সে সবসময় অন্যের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।

ফেলুদার চরিত্রের মধ্যে আমরা নিজেদেরও প্রতিফলন দেখতে পাই। আমরাও তো চাই রহস্যের গভীরে ডুব দিতে, কিন্তু সাহসের অভাবে আমরা পিছিয়ে যাই। আমরাও তো চাই সকল রহস্যের সমাধান করতে, কিন্তু আমাদের বুদ্ধির প্রখরতা ততটা নয়। আমরাও তো চাই অন্যের সাহায্য করতে, কিন্তু আমাদের মানবিকতা অনেক সময়ই স্বার্থের কাছে হেরে যায়।

ফেলুদার চরিত্রের মধ্যে আসলে আমাদের সকলেরই প্রতিচ্ছবি রয়েছে। সেই প্রতিচ্ছবিতে আমরা দেখতে পাই আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং আমাদের অসমর্থতা। বোধ হয় সেই কারণেই তো ফেলুদা এত জনপ্রিয়। সে আমাদের সকলের কাছেই একজন সুপারহিরো। সে আমাদের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করে। সে আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে জাগিয়ে তোলে। সে আমাদের অসমর্থতাকে দূর করে। ফেলুদার চরিত্রে আসলে আমরা সকলেই নিজেদের দেখতে পাই।