রথযাত্রা




ওরে বাবা, আজ তো রথযাত্রা! উৎসবের মেজাজ গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আকাশে বাতাসে শুরু হয়েছে। কলকাতার রাস্তাঘাট ঠাসা, বাসে ট্রামে চড়া যাচ্ছে না, লোকাল ট্রেনের সিট তো আর স্বপ্নেরও অগম্য। রথের দড়ি টানতে মুখিয়ে শহর। সবাই আজ রথের টানে হাত দিতে চায়। ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার রথের রশি ধরে টানার তৃপ্তি আর কিছুতেই মেটে না।
আমি শৈশব থেকেই এই রথযাত্রার সাক্ষী হয়ে এসেছি। সকালবেলা বাবার হাত ধরে মিছিলের দিকে রওনা দেওয়া, রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, রথের উপরে ভগবানের সেবা করার মূর্তি দেখে আনন্দে নাচানাচি করা, সব মিলিয়েই একটা অন্যরকম আনন্দ।
রথ চলার শব্দ, সিম্বলের শব্দ, ভক্তদের জয়জয়কারে মুখরিত হয় শহর। যেন সবকিছুই রথের টানে এক হয়ে যায়। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে রথের রশি ধরে। আনন্দ আর উৎসবের মেজাজে সব ভেদাভেদ ভুলে যায়।
একটা জিনিস খুব মনে পড়ে। আমি ছোটবেলার সময় দাদুর সঙ্গে রথের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই দাদু রথের সামনে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন। আমি তো অবাক! জিজ্ঞেস করলাম, কী করছ দাদু? উত্তরে দাদু বললেন, "দেখ রে, ভগবান এই রথের মধ্যে আছেন। তাই এই রথের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নমস্কার করা উচিত।"
এরপর থেকেই রথযাত্রার সময় আমার বুকের মধ্যে এক আলাদা অনুভূতি জাগে। এটা শুধুই একটা উৎসব নয়, এটা আমাদের বিশ্বাসের প্রতীক। রথের দড়ি টানার মাধ্যমে আমরা ভগবানের সঙ্গে আমাদের যোগ ঘটিয়ে নিই।
আমার প্রিয় রথযাত্রা, তুমি যেন আনন্দ আর উৎসবের প্রতীক হয়ে আমাদের সবার মধ্যে একটা ঐক্যের বন্ধন গড়ে তোলো। তুমি সবার মধ্যে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার বীজ বপন করো। তুমি আমাদের সবার জীবনে সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধি নিয়ে এসো।
রথযাত্রার শুভেচ্ছা!