রেনুকা জগতিয়ানী: চট্টগ্রামের বধূ, ভারতের কিংবদন্তী
আমার এই বাড়ির খুবই কাছে "চট্টগ্রাম ক্লাব" নামের একটি বড় জায়গা আছে। এই ক্লাবের সামনেই একটা প্রধান রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তার একপাশে খুব সুন্দর করে রং করা হয়েছে শুধুমাত্র একটি অংশ। এটা একটা জেব্রা ক্রসিং। এই জেব্রা ক্রসিংয়ের নাম রেনুকা জগতিয়ানী ক্রসিং।
আমি যখনও শিশু ছিলাম, তখনও এই ক্রসিংয়ের নামটা জানতাম না। জানতাম না কে এই রেনুকা জগতিয়ানী। কয়েক বছর পরে, যখন আমার বয়স একটু বেড়ে গেল, তখন আমার বাবা একদিন আমাকে বললেন, রেনুকা জগতিয়ানী নামের এক মহিলা ছিলেন। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের মেয়ে। তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের জন্যই না, ভারতের জন্যও অনেক কিছু করেছেন।
যেদিন আমি প্রথম রেনুকা জগতিয়ানীর কথা শুনলাম, সেদিন ইতিহাসের বই উল্টে তার সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করলাম। আমি দেখলাম, তিনি ছিলেন একজন মহান নারী। সেই সময় একজন নারীর জন্য এতবড় কিছু করা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
রেনুকা জগতিয়ানী ১৯১৭ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন। তার বাবার নাম ছিল কুমুদিনী কান্ত রায়। কুমুদিনী কান্ত রায় ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রের মালিকও ছিলেন। রেনুকা জগতিয়ানীর মা ছিলেন সরলা আরা রায়। সরলা আরা রায় একজন সমাজসেবিকা ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের নারী উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
রেনুকা জগতিয়ানী তার শৈশব কাটিয়েছেন চট্টগ্রামে। তিনি পড়াশোনা করেছেন সেন্ট মেরিস গার্লস স্কুল এবং হলি ক্রস কলেজে। তিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্রী। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
পড়াশোনা শেষ করে রেনুকা জগতিয়ানী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। সেই সময় ভারত ব্রিটিশদের দখলে ছিল। ভারতীয়রা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল। রেনুকা জগতিয়ানীও সেই লড়াইয়ে যোগ দেন।
রেনুকা জগতিয়ানী একজন সাহসী নারী ছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে লড়াই করেছেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দুবার গ্রেফতারও হয়েছে।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে রেনুকা জগতিয়ানী রাজনীতি ছেড়ে দেন। তিনি সমাজসেবায় মনোনিবেশ করেন। তিনি ভারতের নারী ও শিশুদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি স্কুল এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি দলিতদের অধিকারের জন্যও লড়াই করেছেন।
রেনুকা জগতিয়ানী অসামান্য প্রতিভা ও সাহসের অধিকারী নারী ছিলেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের জন্যই না, ভারতের জন্যও একজন মহান নারী। তিনি একজন অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালি নারীদের জন্য একটি আদর্শ।
রেনুকা জগতিয়ানীর জীবনী থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা শিখতে পারি যে, নারীরাও পুরুষদের মতো সাহসী এবং শক্তিশালী হতে পারে। আমরা শিখতে পারি যে, নারীরাও পুরুষদের মতোই সমাজের জন্য কিছু করতে পারে। আমরা শিখতে পারি যে, নারীরাও পুরুষদের মতোই মহান হতে পারে।