রবিচন্দ্রন অশ্বিন




তার নামটা শুনলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই মোক্ষম বলগুলোর ছায়া। ক্যারাম বল, ফ্লিকার, রিভার্স স্লোয়ার, টপ স্পিনার - অশ্বিনের এই বৈচিত্র্যময় বোলিং স্টাইল ক্রিকেট বিশ্বে তাকে করে তুলেছে। একটি লিগে। তিনি এখনো যখন মাঠে নামেন, তখনো ক্রিকেট অনুরাগীদের মধ্যে এক ধরনের আশার সঞ্চার হয়। কেননা তাঁর চিত্তাকর্ষক বোলিং দেখার জন্যই যেন ম্যাচটা দেখতে আসা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অশ্বিনের অনুরাগীদের অভাব নেই।

১৯৮৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবিচন্দ্রন আশ্বিন। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি একটা অন্যরকম টান ছিল। ১২ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট বোর্ড কোচ সি. রাজকুমারের অধীনে তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু। এত দিন পরেও তিনি স্মরণ করেন রাজকুমারকে। তিনি একবার বলেছিলেন, "তাঁর নির্দেশনা ছাড়া আমি আজ যা কিছু তার সবই অসম্ভব হতো।"

তবে সব কিছুতেই কি সফলতা আসে এত সহজে? অশ্বিনের জীবনেও এমন সব ঘটনা ঘটেছে যা তাঁকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে।
তিনি হন মার্টিন ক্রুসাকডরেন মেমোরিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অল ইন্ডিয়া আন্ডার-১৭ স্কুল টিমের অধিনায়ক। কিন্তু তিনি হতাশ হন যখন তাঁকে রাজ্য দল বা ভারতের জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, তিনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দিয়েছিল।

যখন অশ্বিন অল ইন্ডিয়া আন্ডার-১৭ টিমের অধিনায়ক ছিলেন, তখন তিনি প্রথম শিরোনাম জয়ের পরে তার বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ হিসাবে দেখেছিল। তিনি তখন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছিল। তিনি অফ-স্পিন বোলার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, এই ঘরানায় প্রতিযোগিতা কম হবে।

আশ্বিনের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই ঠিক ছিল। অফ-স্পিনার হওয়ার পরে তিনি দ্রুত তামিলনাড়ু রঞ্জি দলে জায়গা করে নেন। তিনি শুধু জায়গা করে নিয়েই সন্তুষ্ট হননি। অল্প কয়েক মরশুমের মধ্যেই তিনি রঞ্জি দলের অন্যতম সেরা বোলার হয়ে উঠেছেন। এরপর তাঁর ভারতীয় দলে আত্মপ্রকাশের খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি।


আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অশ্বিনের প্রভাব


২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অশ্বিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে তিনি মাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন। তবে এরপরে তিনি যেন আর পেছন ফিরে তাকাননি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলে তিনি ছিলেন। সেই বিশ্বকাপের পরে তিনি ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে যান।

অশ্বিনের বোলিং স্টাইলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো তার বৈচিত্র। তিনি তাঁর বোলিংয়ে ক্যারাম বল, ফ্লিকার, রিভার্স স্লোয়ার, টপ স্পিনার সহ বিভিন্ন ধরনের বলের ব্যবহার করেন। এই বৈচিত্র্যের জন্য তিনি বিরোধী ব্যাটসম্যানদের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

অশ্বিনের বোলিংয়ে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে। তিনি তাঁর বলগুলিকে খুব সঠিকভাবে ডেলিভারি করেন এবং সেই সঙ্গে বলকে স্পিন করানোর ক্ষেত্রে তিনি খুব দক্ষ। এছাড়াও তিনি লাইন এবং লেন্থ-এ খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ।

অশ্বিনের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তাঁর মানসিক দৃঢ়তা। তিনি খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং তিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও তাঁর দক্ষতা দেখাতে পারেন। এছাড়াও তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল বোলার। তিনি ব্যাটসম্যানদের আউট করার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোলিং করে যেতে পারেন।

  • ২৯৫+ টেস্ট উইকেট।
  • ১৫০+ ওয়ানডে উইকেট।
  • ৫২+ টি-টোয়েন্টি উইকেট।
  • আইপিএলে প্রায় ১০০ উইকেট।

অশ্বিন এখনো ভারতীয় দলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি তাঁর দলের জন্য একাধিক ম্যাচ জিতে নিয়েছেন এবং তিনি সত্যিই একজন বিশ্বমানের বোলার। তিনি বিপরীত দলের জন্য সবসময়ই একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন সন্দেহ নেই যে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অফ-স্পিনারদের মধ্যে একজন। তিনি ভারতের জন্য শত শত ম্যাচ খেলেছেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন। তাঁর সফলতার মূল রয়েছে তাঁর দক্ষতা, ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রমে।