রাম রহিম: ভক্তি নাকি অন্ধবিশ্বাসের দাসত্ব?




"রাম রহিম" নামটি শুনলেই অনেকের মনেই ভক্তি ও আনুগত্যের ছবি ভেসে ওঠে। এই আধ্যাত্মিক নেতাকে অনেকেই ভগবানের স্বরূপ বলে মানেন, তাঁর নির্দেশে চলতেই যে জীবন সার্থক! কিন্তু এই ভক্তি কি সত্যিই শুধু ভক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ? নাকি এটি অন্ধবিশ্বাসের দাসত্বে পরিণত হয়েছে?
আমার ছোটবেলা থেকেই মনে ছাপ পড়েছে, রাম রহিম একজন মহান সাধক। তাঁর কথায় শান্তি, তাঁর আশীর্বাদে মুক্তি। তাই যখন তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও খুনের অভিযোগ ওঠে, তখন আমি কেমন যেন কেঁপে গিয়েছিলাম। এটা কি ওই মানুষ, যাঁকে আমি ঈশ্বর তুল্য মনে করতাম? নাকি আমাদের সবাইকে বোকা বানানো এক কুটিল মস্তিষ্ক?
আমার মনকে দ্বিধার রশি টানতে শুরু করে। একদিকে তাঁর ভক্তরা, যাঁরা অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন যে তিনি কিছুই করেননি। অন্যদিকে, তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণগুলি, যা তাঁর অপরাধের সাক্ষ্য দেয়। আমি কোন দিকে দাঁড়াবো? ভক্তির পথে হাঁটবো, নাকি সত্যের পক্ষে প্রতিবাদ করবো?
প্রথমে আমি সত্যকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভক্তদের দৃঢ় বিশ্বাস দেখে আমার মন গলতে শুরু করলো। তাঁরা কী ভুল দেখছেন? নাকি আমি কী সঠিক দেখছি না? শেষমেশ, আমি ভক্তদের দলেই দাঁড়িয়ে গেলাম। কেননা, তাঁদের বিশ্বাস দেখে আমার মনে হলো, তাঁরা যে মানুষটিকে দেখছেন, সেটিই আমি না হয় দেখতে পারছি না।
এখন, বছর কয়েক পেরিয়ে গেছে। রাম রহিমের মামলা আদালতে চলছে। তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তিনি জেলের ভিতরে। কিন্তু তাঁর ভক্তরা এখনও তাঁর প্রতি অটল। তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি তখন ভাবি, এ কি ভক্তি নাকি অন্ধবিশ্বাসের দাসত্ব?
রাম রহিমের ঘটনা আমাদের সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা। এটা আমাদের দেখিয়ে দেয় যে, যেকোনও মানুষের প্রতি অন্ধের মতো বিশ্বাস করা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে, যখন সেই মানুষটি কোনও আধ্যাত্মিক নেতা বা ধর্মীয় প্রতীক হয়। আমাদের সব সময় প্রশ্ন করতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে এবং সত্যের সন্ধান করতে হবে।
আমাদের ভক্ত হওয়ার পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জানতে হবে কে কী করছে, কে ভালো, কে খারাপ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সব সময় নিজেরাই চিন্তা করতে হবে। অন্ধের মতো অনুসরণ না করে, সত্যের পথে হাঁটতে হবে।