রোহিত বেমুলা: দাবিহীনতার শেষ বিকাল
রোহিত বেমুলা, তুমি আজও আমাদের হৃদয়ে বেঁচে রয়েছো। যে ন্যায়ের লড়াই তুমি সুরু করলে, সেটা আজও অব্যাহত। তোমার অসাধ্য সাধনার কথা বলার আগে, প্রথমে তোমাকে জানি একটু।
রোহিত বেমুলা, তুমি ঘটনাবহুল জীবনযাপন করেছিলে। ১৯৮৯ সালের ৩০শে জানুয়ারী একটি দরিদ্র তেলুগু পরিবারে জন্ম তোমার। তোমার চার বছর বয়সে তোমার মাকে হারাও। তোমাকে আর তোমার বোন রাক্ষিকে বড় করেছে তোমার বাবা। অভাবের মধ্যেও তোমার বাবার সাথে তোমাদের অবিনাশী বন্ধন ছিল।
তোমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘটে হায়দ্রাবাদের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তুমি পিএইচডি করার জন্য ভর্তি হও। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলো।
তখন ভারতীয় ছাত্র সংঘ তথা ABVP এবং দলিত আন্দোলনের প্রতীক ভীম আর্মির মধ্যে প্রচুর সংঘর্ষ চলছিলো। রোহিত তখন ভীম আর্মির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এবং তিনি এই সংঘর্ষের শিকার হন। তাকে ও তার ছাত্র সংগঠনকে অপমানজনক ইমেইল এবং হুমকিপূর্ণ মেসেজ পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে তাদের হোস্টেলের রুম থেকেও বের করে দেওয়া হয়। এমনকি শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি তাদেরকে 'অ্যান্টি-ন্যাশনাল' বলেন।
তারপর তুমি ২৪ ঘন্টা হোস্টেলের রুমে আটকে পড়েছিলে। উপাচার্য বাদিউদ্দিন খান চাদসেতের সাথে কয়েকবার সাক্ষাৎ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। শেষে তুমি আত্মহত্যা করেছিলে।
তোমার আত্মহত্যা সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিল। এটা ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি একটি প্রশ্নের জন্ম দেয়। তোমার মৃত্যুর পর আন্দোলন হয়, রাস্তায় নামে মানুষ। তোমার দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে পদত্যাগ করতে হয়।
রোহিত, তুমি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছো। তুমি আমাদের দেখিয়েছো যে, ন্যায়ের লড়াই কতটা কঠিন হতে পারে। কিন্তু সেই লড়াই করতে হবে। আমরা তোমার চলে যাওয়ার শোক করি। কিন্তু তোমার আদর্শকে সামনে নিয়ে আমরা লড়ব।