২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট, আমার জীবনের এক আতঙ্কিত অধ্যায় দাগ কাটল। আমি হিমাচল প্রদেশে মনোরম কুলু উপত্যকায় স্বস্তিদায়ক বাসে ভ্রমণ করছিলাম, যখন হঠাৎ করেই আমাদের উপর এক লোমহর্ষক আক্রমণ হল।
রক্তাক্ত রাত:
সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাসটি রিয়াসি শহরের কাছে একটি পরিচিত মহাসড়কে চলা শুরু করল। আমি জানালার পাশে বসে লোভনীয় পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগ করছিলাম, যখন হঠাৎ বাতাসে গুলির শব্দ ভেসে এল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তা আতশবাজি, কিন্তু যখন আমার পাশে বসা ব্যক্তি রক্তাক্ত হয়ে জানালার ওপর হেলে পড়ল, তখন আমার হৃদপিণ্ড মুখে এসে গেল।
আমাদের বাসটি একটি আত্মঘাতী হামলার স্বীকার হয়েছিল। হাজারো চিন্তা আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল: আমি কি বেঁচে যাব? আমার পরিবার কীভাবে খবরটি পাবে? কতক্ষণ সহ্য করতে হবে এই আতঙ্ক?
আমি হতবাক হয়ে পড়লাম এবং আমার চারপাশের ঘটনাবলী আমার মস্তিষ্কে খোদাই হয়ে গেল। হামলাকারীদের মুখে আতঙ্কের চিহ্ন, রক্তাক্ত যাত্রীদের চিৎকার, এবং আমার নিজের অসহায়ত্ববোধ।
অজ্ঞানতা ও দোলাচল:
হামলার কিছু মুহূর্ত পরে, আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। যখন আমি ঘুম থেকে উঠলাম, তখন আমি হাসপাতালে ছিলাম। আমার শরীরের একটি অংশ টানছে এবং আমার মনে মনে বেঁচে থাকার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা অনুভব করছিলাম। কিন্তু আমার সঙ্গী যাত্রীদের কথা ভাবতে ভয় পেলাম।
হাসপাতালে, আমি জানতে পারলাম যে আক্রমণে ১১ জন নিহত এবং অনেকের আহত হয়েছে। ঘটনাটির শোক ও বেদনা আমাদের সকলের হৃদয়ে গভীরভাবে খোদাই হল। আমাদের অজ্ঞান দশা দোলাচলে পরিণত হল, যেখানে আমরা বেঁচে থাকার জন্য কৃতজ্ঞ ছিলাম, কিন্তু হারানো প্রাণের জন্য শোক প্রকাশ করছিলাম।
সাহসের গল্প:
আক্রমণের পরের দিনগুলিতে, আমি আমার সহযাত্রীদের সাহসের গল্প শুনলাম। একজন ব্যক্তি তার বোনের উপর দাঁড়িয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেছিল, অন্যজন নিঃশব্দে আহতদের সাহায্য করেছিল, এবং একজন মা তার শিশুকে স্তন্যপান করিয়ে আক্রমণকারীদের থেকে তাকে সুরক্ষিত রেখেছিল।
এই গল্পগুলি আমাকে আশা দিল যে, এমনকি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও মানবতার কিরণ বিকীর্ণ হতে পারে।
সময়ের নিরাময় শক্তি:
এই ঘটনার পরের বছরগুলি চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি পিটিএসডি এবং উদ্বেগের সম্মুখীন হয়েছি এবং আক্রমণের ফ্ল্যাশব্যাকগুলি এখনও আমাকে কখনও কখনও প্রভাবিত করে। তবে সময়ের নিরাময় শক্তি আমাকে সাহায্য করেছে, এবং আমি এখন জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছি।
হিংসার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো:
রিয়াসি বাস হামলা আমার জীবনকে চিরতরে বদলে দিয়েছে। এটি আমাকে দেখিয়েছে যে সহিংসতা কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে এবং কতটা অকথ্য দুঃখ এটি আনতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের সকলেরই হিংসার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত এবং শান্তি ও সহাবস্থানকে উত্সাহিত করা উচিত।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন তাদের গল্প, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটতে না দেওয়ার জন্য আমাদের কাজ করা উচিত।