লাপাতা লেডিজ




আমরা সবাই জীবনে কতটা বাঁচি? কতটুকু সাহস, কতটুকু ভয়, নিয়মের খাঁচায় আবদ্ধ হওয়া, নিজেকে খুঁজে পাওয়া, পরে নিজেই হারিয়ে যাওয়া।
আজকের অতি আধুনিক সমাজব্যবস্থার মাঝেও নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সংগ্রামের কাহিনী নিয়েই এই লেখা।
ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের জন্য সমাজের একটা নির্দিষ্ট দাড়ি আছে। কী খাব, কী পড়ব, কী করব, কী বলব এমনকি কীভাবে হাসব সেটাও ঠিক করে দিয়েছে সমাজ। এই দাড়ি তৈরি হয়েছে বহু বছরের রীতি-নীতির মধ্যে দিয়ে। এই দাড়িতে বেঁধে সবাইকে চলতে হচ্ছে। কোনো রকম প্রশ্ন করলেই বিচার শুরু হয়ে যায়।
এর মধ্যেও অনেক মেয়ে আছে যারা এই দাড়িতে চলতে রাজি না। তারা নিজেদের পথ নিজেরা তৈরি করবে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আত্মনির্ভর হওয়া। তাই সমাজের নিয়ম না মেনে নিজেদের পথে হাঁটছে অনেক মেয়ে। তবে এটা তাদের জন্য সহজ না। বহু বাঁধা পেরিয়ে, সমাজের তীর্যক দৃষ্টি এড়িয়ে লড়াই করতে হচ্ছে।
তবে এই লড়াইয়ের মূল সমস্যা হলো, এই মেয়েরা নিজেরাই বুঝতে পারে না যে, তারা কী চায়। তাদের সামনে প্রচুর উদাহরণ আছে যেগুলো অনুসরণ করে তারা থাকতে পারে। তারা চাকরি করতে পারে, গৃহিণী হতে পারে, ব্যবসায়ী হতে পারে। কিন্তু সেটা করবে কীভাবে? তার পরিকল্পনা কোনোটাই তাদের নেই। আর না থাকায় হঠাৎ করেই তারা হারিয়ে যায়।
আমাদের দেশে ইদানিং "লাপাতা" শব্দটা খুব শোনা যাচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে "লাপাতা লেডিজ"। যাদের শুধু স্বাধীনতা, আনন্দ আর ভ্রমণ করতে হবে, তারাই লাপাতা লেডিজ। এই শব্দটার অর্থটা কতটা গভীর তা লাপাতা লেডিজরা নিজেরাই বুঝতে পারে না। তারা শুধু স্বাধীন ঘুরে বেড়ানোকেই লাপাতা হওয়া মনে করে। কিন্তু তাদের চেয়ে সত্যিকারের লাপাতা হচ্ছে তারা যারা সব কিছু ছেড়েচুড়ে, সব কিছু ভুলে গিয়ে, সব কিছু হারিয়ে গিয়ে নিজেকে খুঁজতে বেরিয়েছে।
নিজেকে খুঁজে পাওয়াটা সবচেয়ে কঠিন কাজ। কারণ তার জন্য আগে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হয়। যতদিন নিজেকে হারিয়ে ফেলা না যায়, ততদিন নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায় না। যে মেয়েরা নিজেকে হারিয়ে ফেলতে সাহস করেছে, তারাই সত্যিকারের লাপাতা লেডিজ।