লভলিনার জন্ম অসমের গোলাঘাট জেলায়। তার পিতা-মাতা ছিলেন কৃষক এবং তাদের দিনমজুর করে পরিবার লালন-পালন করতে হত। ছোটবেলা থেকেই লভলিনা ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন, কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তাকে খেলাধুলা চালিয়ে যেতে বাধা দিয়েছিল।
তার জীবনে পরিবর্তন ঘটে যখন তিনি অলিম্পিকে পদকজয়ী মুষ্টিযোদ্ধা ম্যারি কমকে দেখেন। ম্যারি কমের অর্জন তাকে অনুপ্রাণিত করে এবং তিনি নিজেও মুষ্টিযুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি স্থানীয় একটি জিমে যোগ দেন এবং শক্তপোক্ত অনুশীলন শুরু করেন।
অনুশীলনের মধ্য দিয়ে লভলিনার প্রতিভা ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তিনি রাজ্য এবং জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি পদক জিতেছেন এবং শীঘ্রই তিনি ভারতের সেরা মহিলা মুষ্টিযোদ্ধদের মধ্যে একজন হিসাবে গণ্য হতে শুরু করেন।
2020 সালে, লভলিনাকে টোকিও অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। তিনি -69 কেজি বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সেমিফাইনালে তুর্কি মুষ্টিযোদ্ধা বুসেনাজ সুরমেনেলির কাছে হেরে যান। যদিও, ব্রোঞ্জ পদকের জন্য তিনি নেদারল্যান্ডসের নুস্কা তঁর্স্তেরিয়াকে পরাজিত করতে সক্ষম হন।
লভলিনার অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক অসম এবং ভারত উভয়ের জন্যই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। এটি অসমের প্রথম এবং ভারতের মাত্র দ্বিতীয় মহিলা মুষ্টিযোদ্ধার অলিম্পিক পদক ছিল।
লভলিনার গল্প হল সংগ্রাম, সংকল্প এবং অসম্ভব স্বপ্ন পূরণের গল্প। তিনি অসমের অহঙ্কার এবং ভারতের গর্ব। তার অর্জন আমাদের সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের স্বপ্নগুলোকে কখনোই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, তবুও তারা কতটা অসম্ভব মনে হোক না কেন।
লভলিনা বরগোহাঁইয়ের সাফল্যকে ভারতে নারী ক্রীড়া উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতির একটি উদাহরণ হিসাবে দেখা যেতে পারে। সম্প্রতি বছরগুলিতে, সরকার মহিলা ক্রীড়াবিদদের সমর্থনে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কিশোরী মেয়েদের জন্য ক্রীড়া প্রচারের উদ্দেশ্যে খেলো ইন্ডিয়া সহ গার্লস স্পোর্টস গ্রাসরুটস প্রোগ্রাম এবং মহিলা ক্রীড়াবিদদের জন্য বৃত্তি প্রদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই উদ্যোগগুলির ফল ইতিমধ্যেই সুস্পষ্ট। লভলিনা বরগোহাঁইয়ের মতো মহিলা ক্রীড়াবিদরা টোকিও অলিম্পিকে ভারতের জন্য বেশ কয়েকটি পদক জিতেছেন। মহিলা ক্রীড়া ভারতে ক্রমবর্ধমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং আমরা আশা করতে পারি যে ভবিষ্যতে আরও অনেক লভলিনা বরগোহাঁইয়ের উত্থান হবে।