আমি কিছুটা লম্বা ছিলাম আমার বয়সের অন্য ছেলেদের তুলনায়। কিন্তু এটা এতটা লম্বা ছিল না যে বেশি লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। কিন্তু বাচ্চারা তো বাচ্চাই। তারা সবকিছু নিয়েই মজা করে। আর আমার সেই একটু বেশি লম্বা হওয়াটাকেও তারা রেহাই দেয়নি।
স্কুলে আমার ডাকনাম হয়ে যায় “লংলেগস”। কিছুটা লম্বা পাওয়া দোষের কি? কিন্তু বাচ্চাদের কাছে তা ছিল তাদের উপহাসের একটি বিষয়। আমি এই উপাধিটিকে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু আর কতোদিন এভাবে চলবে? আমার বার বার মনে হতে থাকে।
একদিন স্কুলের পরে কিছু ছেলে আমাকে ঘিরে ধরে। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “লংলেগস, তুমি কি এত লম্বা পা নিয়ে কীভাবে হাঁটো?”
আমি হেসে বললাম, “এটাই কি তোমাদের এতো বড়ো প্রশ্ন?”
তারা আরও জোরে হেসে উঠল। আমি তাদের ঠাট্টায় জবাব দিয়েছিলাম। আমি তাদের সাথে তর্ক করতে আগ্রহী ছিলাম না।
তারা আমার জবাব পেয়ে আরও উত্তেজিত হয়ে উঠল। তারা আমার চারপাশে ঘুরতে শুরু করল এবং আমার পা টানতে লাগল।
আমি চেষ্টা করি তাদের থেকে দূরে সরে যেতে। কিন্তু তারা আমাকে ছাড়তে চায় না। তারা আমার পা টানার পাশাপাশি আমাকে কাদায় ঠেলাঠেলি করতে শুরু করে।
আমি কাঁদতে শুরু করি। আমি তাদের কাছে বারবার অনুরোধ করি আমাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু তারা আমার কথা শোনে না।
ঠিক সেই সময়, আমার শিক্ষক সেখানে এসে হাজির হন। তিনি ছেলেগুলোকে বকা দিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন।
আমি শিক্ষককে ধন্যবাদ দিই। আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওনা হই।
বাড়িতে গিয়ে আমি আমার মায়ের কাছে সব ঘটনা বলি। আম্মু আমাকে সান্ত্বনা দেন। তিনি বলেন, “তুমি তাদের কথার দিকে মনোযোগ দিও না। তুমি এমনই হবে। এটাই তোমার তৈরি হওয়ার জন্য একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। তুমি নিজেকে যেমন আছ সেভাবেই গ্রহণ করো।”
আম্মুর কথায় আমার কিছুটা ভালো লাগে। আমি বুঝতে পারি তিনি ঠিকই বলছেন। আমি কেন আমার উচ্চতাকে নিয়ে চিন্তা করছি? এটা তো আমারই একটি অংশ।
আমি আম্মুকে আবারো জড়িয়ে ধরি। আমি তাকে বলি, “আমিও তোমার মতোই ভাবব।”
আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “আমি জানি তুমি পারবে।”
আমি জানি এই ডাকনামটা আমার কাছে হয়তো সারা জীবন থাকবে। কিন্তু এখন আর আমার এটা নিয়ে দুঃখ নেই। আমি এটা গ্রহণ করে নিয়েছি। আমি বুঝেছি যে আমার উচ্চতা তো আমারই একটি অংশ।
আর হ্যাঁ, আমি এটাকে নিয়ে গর্বও করছি। কারণ এটাই আমাকে "লংলেগস" করে তুলেছে। এবং আমি লংলেগস হতে ভালোবাসি।